23.7 C
Chittagong
বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদচট্টগ্রামচট্টগ্রামে ৬ মাসে ৪০ শতাংশ বেড়েছে খুন-ছিনতাই ও চাঁদাবাজি

ফ্লাইওভারগুলোই অপরাধের হটস্পট

চট্টগ্রামে ৬ মাসে ৪০ শতাংশ বেড়েছে খুন-ছিনতাই ও চাঁদাবাজি

অপরাধ ডেস্ক :

চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারীর মধ্যেও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনা। প্রায়শই গোলাগুলি ও ছুরিকাঘাতে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এলাকাভিত্তিক আধিপত্য স্থাপনকে সামনে রেখে মাথাচড়া দিয়ে উঠছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌড়াত্ম্য।

একদিকে চুরি-ডাকাতি নিত্য নৈমত্তিক ঘটনায় রুপ নিয়েছে, অন্যদিকে এলাকা ভিত্তিক সন্ত্রাসীদের আধিপত্যের লড়াইয়ে বেড়েই চলেছে অপরাধ।

তাছাড়া দেশজুড়ে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ায় চট্টগ্রামের শহরজুড়ে বেশ কিছুদিন ধরেই চলমান রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন। এসব অপরাধজনিত কারণে চট্টলাবাসীর মনে সন্ধ্যা নামতেই ভয় চেপে বসছে। আতঙ্কিত নগরবাসী।

পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যানের তথ্য মতেও আগের ছয় মাসের তুলনায় এসব অপরাধ বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফাঁড়ি ও থানার টহল পুলিশের কার্যক্রম কমে যাওয়ায় অপরাধের মাত্রা বাড়ছে।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেননি পুলিশের ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তাও। তারা বলছেন, গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনেরে আগে পুলিশ যেভাবে ‘অর্গানাইজড’ ছিল এখন তেমনটা নেই। পুলিশ সদস্যদের ‘মনোবল’ এখনও আগের জায়গায় ফিরে আসেনি। তাই আইন-শৃঙ্খলার এমন পরিস্থিতি ‘খুব অস্বাভাবিক’ নয়।

পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, গত ছয় মাসে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে ১১৮টি, যা গত বছরের একই সময়ে তুলনায় ৩৪টি বেশি।

এসবের মধ্যে বেশি ঘটেছে খুন ও অপহরণের ঘটনা। এছাড়া দিনে দুপুরে ছিনতাই ও অস্ত্র দেখিয়ে চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও হুমকির মতো ঘটনা চিন্তায় ফেলেছে নগরবাসীকে।

বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ২ হাজার ৬৭টি।

এর মধ্যে হত্যা মামলা হয়েছে ৪৪টি, ডাকাতির মামলা হয়েছে ৪২, নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৬৭, অপহরণের ২৩, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ৩৪ ও চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৫৯টি।

২০২৪ সালের আগস্টে মেট্রোপলিটনের ১৬টি থানায় ২৪৬টি মামলা হলেও সেপ্টেম্বর থেকে মামলার পরিমাণ বেড়েছে।

এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে ৩৮০টি মামলা, অক্টোবরে ৩৫৬, নভেম্বরে ৩৭৬, ডিসেম্বরে ৩৩৮ ও জানুয়ারিতে মামলা হয়েছে ৩৭১টি।

এদিকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে দাবি সিএমপির। পুলিশ জানায়, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

তবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার আশঙ্কায় সার্বক্ষণিক ‘আতঙ্কিত’ থাকার কথা বললেন পুলিশের কয়েকজন সদস্য। তাদের ভাষায়, পুলিশের জন্য এখন স্বাভাবিক কাজ করা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে গেছে। অভিযানে পরিচালনা করতে গিয়ে কোথাও কোথাও পুলিশ সদস্যের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

গেল ১৪ জানুয়ারি রাতে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকায় কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় পুলিশের চেকপোস্টে হামলায় এসআই হাবিবুর রহমান ও এএসআই অসিত নাথ, কনস্টেবল আবদুল সাত্তার, আমিরুল ইসলাম ও ফরিদ শেখ আহত হন। অবশ্য পরদিন এই ঘটনায় মোরশেদ খান ও মো. করিম নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর পুলিশের কর্ম তৎপরতা এখনো পুরোদমে দেখা যাচ্ছে না। দিনে দুপুরে ছিনতাই ও অস্ত্র দেখিয়ে চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও হুমকির মতো ঘটনা চিন্তায় ফেলেছে নগরবাসীকে।

হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অ্যাপভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলছেন, ‘পুলিশ ধরতে পারছে না আসামিদের, এটা তো আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না। জনগণের সাহায্যে হোক কিংবা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হোক, এসব অপরাধীকে ধরা কিন্তু পুলিশের কাছে কোনো ব্যাপার না।

এমন বাস্তবায়তায় ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলছে নগর পুলিশ। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কথাও বলছে তারা।

সারা দেশের তুলনায় চট্টগ্রামে অপরাধের হার তুলনামূলক কম দাবি করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকায় প্রায় ৮০ লাখ মানুষের জন্য রয়েছে ১৬টি থানা। এই বিশাল এলাকার জন্য পুলিশ সদস্য রয়েছে প্রায় ৭ হাজার। বিদ্যমান জনবল কাঠামো দিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী অপরাধীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছে পুলিশ।

তিনি বলেন, অপরাধ কমিয়ে আনতে এলাকাভিত্তিক সিটিজেন ফোরাম গঠন করা হয়েছে। বিশেষ করে রমজান মাসে শপিংমল ও নগরীর সড়কগুলোয় বাড়তি টহল দেয়া হচ্ছে।

তাছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ পেলেই দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরা ছুটে যাচ্ছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

অপরাধের হটস্পট ফ্লাইওভার
বিগত ৬ মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর ফ্লাইওভারগুলোই রাতে অপরাধের হটস্পটে পরিণত হয়। পর্যাপ্ত সড়কবাতি না থাকায় চারটি ফ্লাইওভার ও একটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন থামিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ফ্লাইওভারের মতো স্থাপনা অন্ধকারে থাকলে অপরাধের হার বেড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তাদের মতে দীর্ঘদিন সংস্কারবিহীন থাকার পাশাপাশি নানা অব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে ফ্লাইওভারগুলোয়।

এমনকি ফ্লাইওভারের পিলারের নিচে গার্ডার অংশেও কিশোর গ্যাংসহ অপরাধীরা নির্বিঘ্নে অপরাধ ঘটিয়ে চলেছে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, চসিকের পক্ষ থেকে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানোর কথা থাকলেও তারা তেমন কোনো দায়িত্বই পালন না করায় ফ্লাইওভারের বৈদ্যুতিক বাতি, কেবল, রেলিংসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরির হার বেড়েছে।

এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ফ্লাইওভারের বৈদ্যুতিক বাতি, কেবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম প্রতিনিয়ত চুরি হওয়ায় মেরামত করেও ফ্লাইওভারগুলোয় সড়কবাতি নিয়মিত জ্বালাতে হিমশিম খাচ্ছে চসিক কর্তৃপক্ষ। চুরির কারণে রাতে কিছু কিছু বৈদ্যুতিক বাতি বন্ধ থাকে।

তবে চসিকের পক্ষ থেকে নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে মেরামত, সড়ক কার্পেটিংসহ বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ঈদের মধ্যেই সংস্কারকাজ শেষ করে ফ্লাইওভারগুলো নিরাপদ করতে চসিক কাজ করছে বলেও জানান চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল।