29.6 C
Chittagong
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদজাতীয়কোথায় কিভাবে আছেন অসুরের বংশধররা

কোথায় কিভাবে আছেন অসুরের বংশধররা

“আমি যখন প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গে যাই একটা কর্মসূচীতে, সেখানে আমি গেছি শুনে

“তারা আমাকে দেখে বলেছিলেন যে আরে আপনাকে এরকম দেখতে, আমাদের তো মনে হয়েছিল যে মাথায় শিঙ থাকবে, বড় বড় দাঁত থাকবে! হাসতে হাসতে কথাগুলো বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন অনিল অসুর।

আমি যখন প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গে যাই একটা কর্মসূচীতে, সেখানে আমি গেছি শুনে অনেক মানুষ আমাকে শুধু দেখতেই চলে এসেছিলেন। আমি কিছুটা অবাকই হয়েছিলাম, বুঝতেই পারছিলাম না যে কেন সবাই আমাকে দেখতে আসছে!

তার সেই ‘অবাকথ হওয়া অবস্থাটা কেটেছিল তাকে দেখতে আসা মানুষজনের প্রশ্নে।

হিন্দু বাঙালীদের সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজোর সময়ে যে মহিষাসুরের মূর্তি দেখা যায় দেবী দুর্গার পায়ের নিচে, সেই মহিষাসুরের সঙ্গে চেহারার মিল খুঁজতে গিয়েছিলেন ওই মানুষরা

সেই মানুষজনকে তিনি জবাব দিয়েছিলেন, “আরে আমি তো মানুষ! কে বলেছে যে অসুরদের মাথায় শিং থাকে, বড় বড় দাঁত থাকে!

মি. অসুর বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “আসলে মানুষের মনে ওরকমই একটা ছবি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে যে আমরা খলনায়ক, আমাদের ওইরকম দানবের মতো দেখতে। যারা মহিষাসুর সহ আমাদের পূর্বপুরুষদের পরাজিত করে আমাদের জমি-জঙ্গল দখল করে নিয়েছে, মানুষের মনে অসুর সম্পর্কে এরকম ধারণাটা তারাই তৈরি করেছে। কিন্তু সেটা তো আসলে আর্য-অনার্যদের লড়াইতে আমাদের ছলচাতুরী করে পরাজিত করার কাহিনী।

এই উপজাতির সদস্য এবং নৃতত্ত্ববিদরা মনে করেন যে হিন্দু বাঙালীদের দুর্গাপুজোয় যে মহিষাসুর বধের কাহিনী রয়েছে, তিনি এই অসুর উপজাতিরই পূর্বপুরুষ, মহা-বিক্রমশালী এক আদিবাসী রাজা ছিলেন।

তবে হিন্দু পুরাণ বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের মধ্যে আবার দুর্গাপূজোর কাহিনী আদৌ আর্য-অনার্যদের লড়াই কী না, তা নিয়ে মতভেদ আছে।

জ্যোতিরাও ফুলে অথবা বি আর আম্বেদকরের মতো দলিত-আদিবাসী শ্রেণির দৃষ্টিকোণ থেকে যারা ইতিহাস বিশ্লেষণ করেন, তারা এই কাহিনীকে আর্য-অনার্যদের মধ্যে লড়াই বললেও হিন্দু শাস্ত্রের পণ্ডিতরা তা মানেন না।সূত্র বিবিসি

দুর্গাপুজো ও অসুর

অনিল অসুর সেই ‘অসুরথ তপশীলি উপজাতির মানুষ। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার আর ঝাড়খণ্ডে তপশীলি উপজাতিদের যে সরকারি তালিকা আছে, তার মধ্যে প্রথম নামটিই এই অসুর উপজাতির।

ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলায় থাকেন অনিল অসুর। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, সিপিআইয়ের সদস্য। দুবার বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছিলেন।

তারা পেশাগত ভাবে পাথর গলিয়ে লোহা বার করার কাজ করে থাকেন। সেই প্রাচীন পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যেই অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে রক্ষা করেন তারা। তবে অনেক অসুরই অন্যান্য পেশাও বেছে নিয়েছেন এখন।

“যেমন আমার বাবা তো স্কুল শিক্ষক ছিলেন। বাবার কথায় মনে পড়ল, একবার দুর্গাপুজোর সময়ে আমার মা পুজো দিতে যাচ্ছিলেন, বাবা কিছুটা স্বগতোক্তি করেই বলেছিলেন, ‘হুঁঃ, চলল আমাদের পূর্বজদের হত্যাকারিণীকে পুজো দিতে!থ, অর্থাৎ আমাদের সম্প্রদায় এখনও বিশ্বাস করে যে দুর্গা আমাদের পূর্বপুরুষ মহিষাসুরকে হত্যা করেছিলেন। এরপর থেকে আর কখনও আমার মা দুর্গাপুজো দিতেন না।”

“আমরা মহিষাসুরেরও পুজো করি না। তার কোনও বিগ্রহ বা প্রতিকৃতি অসুর পরিবারে থাকে না। আমরা শুধু মনে মনে তাকে প্রণাম জানাই, স্মরণ করি। তবে এখন আদিবাসী সমাজ দুর্গাপুজোর সময়ে যে অসুর পুজো বা অসুর স্মরণ করছেন, সেগুলো একটা পৃথক সামাজিক আন্দোলনের অংশ। এই সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে আর্য সংস্কৃতির বিরুদ্ধে একটা পাল্টা আখ্যান তৈরি হচ্ছে,চ্ বলছিলেন অনিল অসুর।