26.1 C
Chittagong
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদআন্তর্জাতিকসালমান খানকে হত্যার হুমকি দাতা বিষ্ণুই কি ভারত সরকারের এজেন্ট

কানাডার বিস্ফোরক মন্তব্য

সালমান খানকে হত্যার হুমকি দাতা বিষ্ণুই কি ভারত সরকারের এজেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

এক সাংবাদিক সম্মেলনে সোমবার কানাডার পুলিশ অভিযোগ করেছে, ভারত সরকারের এজেন্টরা কানাডায় খালিস্তানপন্থী আন্দোলনের নেতাদের নিশানা করতে “বিষ্ণোই গ্রুপের মতো সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠীগুলোকেচ্ ব্যবহার করছে।

পৃথক শিখ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি করে এই খালিস্থানি আন্দোলন।

গত বছর কানাডার মাটিতে এমনই এক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ভারত এবং কানাডার মধ্যে তিক্ততা বাড়তে থাকে।

এরপর সোমবার দুই দেশ একে অন্যের শীর্ষ কূটনীতিকদের বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়। তার কয়েক ঘণ্টা পরে পুলিশের সাংবাদিক সম্মেলনে এই অভিযোগ উঠল।

দিল্লি এই অভিযোগকে ‘অযৌক্তিকথ বলে উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা অভিযোগ তুলেছে যে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো রাজনৈতিক লাভের জন্য কানাডার বিশাল সংখ্যক শিখ সম্প্রদায়কে ব্যবহার করছে।

সোমবারের সাংবাদিক সম্মেলনে কানাডার পুলিশ যে ব্যক্তির প্রসঙ্গ টেনে এনেছে, তিনি লরেন্স বিষ্ণোই। ৩১ বছর বয়সী এই ভারতীয় যুবকের নাম একাধিক বড়সড় অপরাধের সঙ্গে জড়িয়েছে।

দেশের তো বটেই আন্তর্জাতিক স্তরেও শিরোনামে উঠে এসেছেন তিনি।

গত সপ্তাহে মহারাষ্ট্রের সাবেক প্রতিমন্ত্রী তথা ন্যাশানলিস্ট কংগ্রেস পার্টির নেতা বাবা সিদ্দিকীকে মুম্বাইয়ে তার ছেলের দফতরের কাছেই হত্যা করা হয়। ভারতের পুলিশের অভিযোগ, ৬৬ বছরের এই বহুল পরিচিত নেতার হত্যার সঙ্গে লরেন্স বিষ্ণোই গোষ্ঠীর যোগ রয়েছে।

এই ঘটনায় তিনজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ইতিমধ্যে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

মি. বিষ্ণোইয়ের এক সহযোগী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা পোস্ট শেয়ার করে বাবা সিদ্দিকীর হত্যার পিছনে তাদের গোষ্ঠীর হাত রয়েছে বলে দাবি জানিয়েছিল।

এক সময় ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেডথ তালিকায় থাকা লরেন্স বিষ্ণোই কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। আপাতত তিনি তার জন্মস্থান পাঞ্জাব থেকে বহুদূরে গুজরাটের কারাগারের রয়েছেন।

তা সত্ত্বেও তার ‘দুঃসাহসিক প্রভাবথ এখনও বহাল রয়েছে বলেই মনে করছে পুলিশ।

সিধু মুসে ওয়ালা নামে এক জনপ্রিয় পাঞ্জাবি গায়ক ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে তার গ্রামের কাছে গুলিবিদ্ধ হন। অভিযোগ আছে, এই চাঞ্চল্যকর হত্যার মামলাতেও মি. বিষ্ণোই মুখ্য অভিযুক্ত।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। বলিউড তারকা সালমান খানকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

অভিনেতা সালমান খানের বিরুদ্ধে রাজস্থানে দুটো কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের অভিযোগ তুলে লরেন্স বিষ্ণোইয়ের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিরোনামে আসেন তিনি, ‘কুখ্যাতিওথ জোটে।

প্রসঙ্গত রাজস্থানের বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের কাছে কৃষ্ণসার প্রজাতির হরিণ পুজনীয়।

যেদিন যোধপুরের আদালতে হাজির করা হয়েছিল মি. বিষ্ণোইকে, সেদিন কোনওরকম রাখ ঢাক না করে অপেক্ষারত মিডিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছিলেন, “সালমান খানকে এখানে, যোধপুরে হত্যা করা হবে … তখন সে আমাদের আসল পরিচয় জানতে পারবে।

ঘটনাক্রমে, দিন কয়েক আগে বাবা সিদ্দিকী নামে যে রাজনীতিবিদকে হত্যা করা হয়েছে, তিনি বলিউড তারকা সালমান খানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।

গত বছরের মার্চ মাসে একটা সংবাদমাধ্যমের চ্যানেল পাঞ্জাবের জেল থেকেই লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দুটো সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করে। এরপরই হাইকোর্টের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।

তবে কারাগার থেকে একজন ‘হাই-সিকিউরিটিথ বন্দি কীভাবে ফোন মারফত সাক্ষাৎকার দিতে পারেন, তা রহস্যই রয়ে গিয়েছে।

ফেডারেল তদন্তকারীদের অনুমান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান ও দিল্লি জুড়ে ৭০০ সদস্যের একটা বড় অপরাধমূলক গোষ্ঠীকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করে করেন।

এই গোষ্ঠীর সদস্যরা তারকাদের থেকে চাঁদা আদায়, মাদক ও অস্ত্রের চোরাচালান এবং টার্গেট কিলিং-এর মতো বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

তার সঙ্গী গোল্ডি ব্রার কানাডায় বসে দূর থেকেই এই দলকে পরিচালনা করছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গায়ক সিধু মুসে ওয়ালার হত্যার ঘটনায় গোল্ডি ব্রারও কিন্তু অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন।

এদিকে, লরেন্স বিষ্ণোইয়ের বিরুদ্ধে ৩০ টারও বেশি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ১৯টা মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় আছে।

পাঞ্জাবের ‘অ্যান্টি গ্যাংস্টার টাস্ক ফোর্সথ-এর সিনিয়র অফিসার গুরমিত চৌহান বলেন, “ও (লরেন্স বিষ্ণোই) জেল থেকেই নির্বিঘ্নে নিজের গ্যাংকে পরিচালনা করে। এর জন্য ওর সমস্ত কিছু সমন্বয় করার প্রয়োজন পড়ে না।চ্

“ও একটা অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ অন্যান্য গ্যাংস্টারদের মতো নয়। ওর চিন্তা বড়সড় মাপের।চ্

লরেন্স বিষ্ণোইয়ের জন্ম পাঞ্জাবের একটা সচ্ছল পরিবারে। গ্রামের সবচেয়ে ধনীদের মধ্যে রয়েছে তাদের পরিবার। ১০০ একরেরও বেশি জমি দ্বারা বেষ্টিত প্রশস্ত বাংলোতে বাস করে বিষ্ণোই পরিবার।

প্রসঙ্গত, তার বাবা, একজন সাবেক পুলিশ কর্মী। যদিও পারিবারিক জমি দেখাশোনা করার জন্য পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। লরেন্স বিষ্ণোইয়ের মা একজন গৃহবধূ।

এই দম্পতির দুই ছেলে- লরেন্স এবং অনমোল বিষ্ণোই। দুজনই এখন সিধু মুসা ওয়ালা হত্যা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত। বিবিসি