হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের নামে ধারাবাহিক এই সহিংসতার পেছনে ছিল দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা এবং সরকার উৎখাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ষড়যন্ত্র। সরকার বিরোধী বিভিন্ন দলের অর্থায়নসহ সার্বিক সহযোগিতায় তাদেরই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতের ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ধারাবাহিক এই জিজ্ঞাসাবাদে সরকার বিরোধী জামায়াত-বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে হেফাজতের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
হেফাজত নেতারা মনে করতেন, সরকার পতন হলে তাদের সহায়তা ছাড়া কেউ রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে পারবে না। হেফাজতে ইসলামকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে বার বার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মাদ্রাসাছাত্রদের। তাদের লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল নেতারা।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে কর্মসূচির মাধ্যমে সরাসরি সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করেছিল হেফাজতে ইসলাম। আর এই ষড়যন্ত্রে হেফাজতের সঙ্গী ছিল তৎকালীন বিরোধী দল জামায়াত-বিএনপি জোট।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, ৫ মে ওই কর্মসূচির আগে দফায় দফায় বৈঠক করেন হেফাজত ও বিএনপি নেতারা। হেফাজত নেতা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও গোপন বৈঠকে বসেছিলেন। এর একটি বৈঠকে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির জন্য হেফাজতকে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়। টাকার একটি বড় অংশ দেন খালেদা জিয়ার তৎকালীন উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে এর আগে আবদুল আউয়াল মিন্টুর সঙ্গে হেফাজতের বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত এবং তদন্তে এ বিষয়ে আরও অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে। তদন্তে যথাযথ তথ্য বেরিয়ে এলে সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিবির আরেক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে’র ষড়যন্ত্রে কারা কারা অংশ নিয়েছিলেন এবং কারা কারা এর পেছনে ছিলেন তাদের নাম আমরা পেয়েছি। হেফাজতকে যারা রসদ জুগিয়েছিল সরকার বিরোধী সেইসব রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দর নাম বেরিয়ে আসছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানো যায় কি-না সেই উদ্দেশ্যে হেফাজতে ইসলাম সহিংসতা চালিয়েছিল বলে আমাদের তদন্তে উঠে আসছে। তাদের অবশ্যই রাজনৈতিক অভিলাষ ছিল। হেফাজতের নানা ধরনের গোপনীয় কর্মকাণ্ড আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী খতিয়ে দেখছে।
বুধবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘হেফাজতের ফিন্যান্স যারা করেছে তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। কিছু কিছু উপাদান পাচ্ছি, তবে এখনই অ্যানাউন্স করতে চাই না। আরও কিছুদিন তদন্ত করে তারপর অ্যানাউন্স করব। কার অ্যাকাউন্টে কোথা থেকে কত টাকা আসছে তদন্তে বের হয়ে আসবে।’