**নজিবুলের উন্নয়ন **সনির বাবার দোয়া ও ভক্তের ভোট ** তৈয়বের তৃণমূল কানেকশন ** সাইফুদ্দিনের মহাজোট সমর্থন >মূল ফ্যাক্ট পেয়ারুর আর্শিবাদ ও ডানপন্থী ভোট
নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসনে আসন্ন সংসদ নির্বাচনী সমিকরন আরো জটিল হয়ে উঠেছে। এক সময়ের সন্ত্রাসের জনপদ খ্যাত এই আসনের বর্তমান এমপি বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।
তিনি বলেন, আমি গত তিনবার এই আসনের এম পি হিসাবে এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন করেছি। ২০০৪—২০০৫ সালের দিকে ফটিকছড়ির প্রত্যন্ত গ্রামে কেউ খুন হলে পুলিশ যেতে দিন পার হয়ে যেত। এখন এলাকার প্রায় সড়ক র্কাপেট মোড়ানো।
গত ১০ বছরে ফটিকছড়ি উপজেলা সন্ত্রাসের জনপদ থেকে শান্তির জনপদে রূপান্তরিত হয়েছে। যে কারনে জনগণ আমাকে ভোট দিবে।
তিনি উল্লেখ করেন, আমি এই আসনে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। আমি ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছি। আমি ভোটারদের বুঝতে পারি।
ফটিকছড়ির জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন সাংসদ রফিকুল আনোয়ারের কন্যা বর্তমান সংরক্ষিত নারী আসন ৬ এর সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পেয়ে কোমর বেধে মাঠে নেমেছিলেন।
গত ২৯ ডিসেম্বর হঠাৎ যে যাত্রায় ছন্দপতন ঘটে। সনিকে আ. লীগ হাইকমান্ড থেকে সুপ্রিম পার্টির প্রার্থীর পক্ষে কাজের নির্দেশ দেয়া ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাতদিন লাগাতার সভা সমাবেশ ও গণসংযোগ করেছেন তিনি।
হঠাৎ সুপ্রিম পার্টির হয়ে কাজ করার ঘোষনা তার কমীর্ সমর্থকরা কেউ মেনে নিতে পারছে না। স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি সাধারণ জনগণের সাথে কথা বলে জানা যায়, সনি অনেকটা হতাশ। তবে তার সমর্থকরা হাল ছাড়বে না বলে তারা মনে করেন।
আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ দলীয় উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ ফটিকছড়িতে বিএসপি প্রার্থীর পক্ষে আমাদের কাজ করতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বৃহস্পতিবার ফোনে আমাকে বিএসপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটা দলের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দলের প্রতিনিধি। দলের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করাটাই আমাদের কর্তব্য।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব ও ফটিকছড়ির সন্তান কাজী মহসীন পূর্ব বার্তাকে বলেন, সকালেই সনি আমাকে ফোন করেছেন। তিনি নির্বাচন করতেই মাঠে নেমেছেন।
দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশে তিনি নিশ্চুপ থাকলেও ব্যালটে নৌকা মার্কা থেকে যাবে। সনি রফিকুল আনোয়ারের কন্যা। নিজে সংরক্ষিত আসনের সাংসদ। এলাকায় জনপ্রিয়তাও কম নয়। সব বিবেচনায় সনি নিষ্ক্রিয় থাকলেও মানুষ তাকে ভোট দিবে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভান্ডারী শেষ মুহুর্তে মহাজোটের সমর্থন পেয়েছে বলে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত।
মহাজোটের আর্শিবাদ এবং ভান্ডারী ভক্তকূলের সমর্থনে তিনি নির্বাচিত বলে জানিয়েছেন। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা বিএসপির যাত্রা শুরু হয়। একাধিক বিএনপি নেতা কর্মী তার দলের দায়িত্বে রয়েছেন।
অন্যদিকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগ নেতা আবু তৈয়ব মনে করেন, এক সময় ফটিকছড়িতে সাকা ক্যাডার ও জামায়াত শিবিরের তান্ডবে স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষ এলাকায় থাকতে পারতো না।
আমি তখন তাদের হয়ে জামায়াত শিবির সাকা ক্যাডারদের সাথে যুদ্ধ করেছি। উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পর সর্বস্তরের মানুষের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে।
কৃষক, মজুর, কামার, কূলি সকলে আমাকে ব্যাপক সমর্থন দিচ্ছে। যাদের বক্তব্যের অনেক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়েছে। সাধারণ জনগণের ভোটেই আমি জিতব ইনশাল্লাহ।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়েনের যুগ্ম মহাসচিব ও স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহসীন কাজী বলেন, ফটিকছড়ির নির্বাচন পরিস্থিতি ভিন্ন। এই আসনে চার প্রার্থী নির্বাচনী দৌড়ে পাল্লা দিচ্ছেন।
চারজনই কোন না কোন ভাবে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট সংশ্লিষ্ট। শেষ মূহুর্তে মহাজোট থেকে সুপ্রিম পার্টির সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডীর পক্ষে মহাজোটের ঘোষণা তৃণমূল পর্যায়ে কতটুকু প্রভাব ফেলবে তা বিবেচ্য বিষয়। তবে এই উপজেলায় অর্ধেকের কাছাকাছি বিএনপি জামায়াত ভোট।
বিএনপি জামায়াত নেতারা নির্বাচন বর্জন করলেও সাধারণ সমর্থক অনেকেই ভোট দিতে যাবেন। তাদের ভোট এই আসনের ফলাফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমার ধারণা। তবে ফটিকছড়ি আসনে বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলামের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।
আসন্ন নির্বাচনে তার কর্মতৎপরতা অনেক ভোটারকে প্রভাবিত করবে। সব মিলিয়ে এই আসনের নির্বাচন জমে উঠেছে বলে তিনি জানান।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ—সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পেয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তাকে বলছে, দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা যেন বিএসপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। আমরা দল করি, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করাটা আমাদের দায়িত্ব।
স্থানীয়দের মতে, আগে তিনজন হেভিওয়েট প্রার্থী একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল। এখন নতুন খেলোয়াড় সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারী। ভোটের লড়াইয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পাড় হওয়া প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। তাই প্রার্থীদের এই মর্যাদার লড়াইয়ে নির্বাচনী প্রচারণা ভোটারদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এই আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বর্তমান সংসদ সদস্য।
তিনি ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে পরপর দুই মেয়াদে জোট থেকে মনোনয়ন পান এবং দুইবারই নির্বাচিত হন। তবে এবার তাকে জোট থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে এ আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।
সনি প্রয়াত রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে। রফিকুল আনোয়ার ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য হন চট্টগ্রাম—২ (ফটিকছড়ি) আসনে দলীয় প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভাণ্ডারীর পক্ষে নেতাকর্মীদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম ২ এবং জাতীয় সংসদের ২৭৯ নম্বর আসন।
বিশেষ রিপোর্ট/এআর/আর এস