** হাতমৌজা পড়ে গণসংযোগ করতেন মোর্শেদ খান, (১৯৯১—২০০৬) ১৫ বছর দেখেননি এলাকাবাসী সুখ দুঃখ
** পদত্যাগের হুমকি দিয়েও কালুরঘাট সেতু করতে পারেনি বাদল
** সেই কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি এবার ছালামের।
নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৯৩০ সালে কালুরঘাট সেতু নির্মানের পর চট্টগ্রাম নগরীর অদূরে বোয়ালখালী উপ—শহর হওয়ার সম্ভাবনাটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল। সময় গেছে, চট্টগ্রাম নগর এখন মহানগর হয়েছে। কাছের বোয়ালখালী ধীরে ধীরে সরে গেছে দূরে। একটি সেতুর কারনে শহরের কাছের এলাকাটি অনেকটা অজ পাড়াগায়ের মতোই মহানগরী থেকে বিচ্ছিন্ন।
১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আসনটি ছিল বিএনপির নিয়ন্ত্রণে। এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও হন মোর্শেদ খান। তিনি হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু কখনও এলাকাবাসীর সুখ দুঃখ উন্নয়ন নিয়ে ভাবেননি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
তার নিজের এলাকা কালুরঘাটের অনেক এলাকা সারা বছর ডুবে থাকতো হাটু পানির নিচে। নির্বাচন আসলে তিনি আসতেন। হাতমৌজা পড়ে মানুষের সাথে হাত মেলাতেন। গরীবের হাতের ময়লা জিবানু যাতে হাতে না লাগে। আসতেন জয় করতেন। নিজের উচ্চ আসনে চলে যেতেন।
২০০৮ সালে জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল এখানে বিএনপির কর্তৃত্বের অবসান ঘটান। ২০১৪ সালেও মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। মুক্তিযোদ্ধা এই সাংসদ সুবাক্তা।
সংসদ অধিবেশনে সব সময় স্বরব থাকতেন। বোয়ালখালী কালুরঘাট সেতুন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। নিরুপায় হয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগের হুমকি দিয়ে সময় বেধে দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্রিজ হয়নি।
বাদলের মৃত্যুর পর মোসলেম উদ্দিন চেষ্টা করলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। নোমান আল মাহমুদ অভিষেক শেষ করার আগেই সময় শেষ।
বোয়ালখালী বাসীর ভোট পেতে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম আবারও কালুরঘাট সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বেশ কয়েকজন এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সিডিএ চেয়ারম্যান থাকাকালীন বেশ কয়েকটা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। যে কারনে অনেকে আবদুচ ছালাম সেতু করতে পারবেন বলে তাদের ধারণা।
এই বিষয়ে তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হলে সেতু হবে ইনশাল্লাহ। শুধু কালুরঘাট সেতু নয় বোয়ালখালী চান্দগাঁও পুরো এলাকা উন্নয়ন করতে কাজ করবো।
এই আসনে মহাজোট প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ। যিনি মনোনয়ন পাওয়ার আগে কখনও বোয়ালখালী চান্দগাঁও এলাকায় তেমন যাননি। এলাকার অনেক সাধারণ মানুষ তাকে আগে চিনতো না। এখন ভোটের প্রার্থী হিসাবে দেখছেন।
চান্দগাঁও মৌলভি পুকুর পাড় এলাকার মহল্লা কমিটির অর্থ সম্পাদক নুরুল আলম বলেন, ছালাম সাহেবকে চান্দগাঁও এর মানুষ হিসাবে সবাই চিনে। কিন্তু তিনি মহাজোট থেকে মনোনয়ন পাননি।
সোলায়মান আলম শেঠ মহাজোটের প্রার্থী হয়ে এসেছেন। এলাকার সাধারন মানুষ তাকে চিনেন না। মূলত তিনি মহাজোটের ছায়াতলে থেকে নির্বাচনী বৈতরনি পার হতে চেষ্টা করছেন।
অপর সতন্ত্র প্রার্থী মহানগরীর জামাল খান ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর বিজয় কিষান চৌধুরী নিজেকে বোয়ালখালীর সন্তান উল্লেখ করে পোস্টার লিফলেট লাগিয়েছেন। এলাকার সন্তান হিসাবে তিনি জনগণের মন জয় করে ভোট পাবেন বলে আশাবাদী।
কিন্তু বোয়ালখালী চরনদ্বীপ এলাকার বাসিন্দা আবদুল মোতালেব জানান, বিজয় কিষান নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগে কখনও এলাকায় আসেননি। তিনি বোয়ালখালীর সন্তান সেটাও আমরা পোস্টারের মাধ্যমে জানতে পারছি।
এই বিষয়ে বোয়ালখালী কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন কমিটির সাধারন সম্পাদক রমেন দাশগুপ্ত বলেন, সেতুর বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে বিজয়ি হয়েছেন প্রার্থীরা।
চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেললাইন হওয়ার প্রস্তাবের শুরু থেকে বোয়ালখালী বাসীর বড় আশা ছিল এবার নতুন সেতু হবে। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি।
এখন নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিতে মানুষের ভরসা কমে গেছে। তবুও সংসদীয় এলাকার বড় ব্যবসায়ী সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের প্রতিশ্রুতিতে অনেকে আশার আলো দেখছেন। বাকিটা নির্বাচনের পরে দেখা যাবে।
বলেন, “পুরো চট্টগ্রামেই কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন সবচেয়ে বড় নির্বাচনী ইস্যু,” বোয়ালখালীর মানুষ যেমন চট্টগ্রাম যেতে এই সেতুর ওপর নির্ভরশীল, তেমনি চাঁন্দগাঁও আর চট্টগ্রাম শহরের অন্য এলাকার লোকজনকে নদীর অপরপাড়ে কাজেকর্মে যেতে এই সেতু পার হতে হয়।
তিনি বলেন, “একটা নতুন সেতু হলে, আর ওপাশে যদি রাস্তা নির্মাণ হয় বান্দরবান পর্যন্ত, তাহলে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের চেহারাই পাল্টে যাবে।
বোয়ালখালীতে প্রচুর মিল—ফ্যাক্টরি থাকায় শুধু যাতায়াত নয়, এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক।”
সরেজমিনে এই আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভোটের দিন ঘনিয়ে আসায় চট্টগ্রাম—৮ (বোয়ালখালী—চান্দগাঁও) আসনের প্রার্থীরা প্রতিদিন মধ্যরাত পর্যন্ত প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ভোটারদের মতে, এই আসনে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রচারণায় এই তিন প্রার্থীই দৃশ্যত এগিয়ে। ভোটাররা জানান, এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকায় ত্রিপক্ষীয় ভোট—যুদ্ধের আশা করছেন তারা।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রত্যাহার করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের দুই নেতা।
তারা হলেন, আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালাম এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কুমার চৌধুরী।
ভোটাররা জানান, চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের সহ—সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ছালামকে সমর্থন দিচ্ছেন।
অপরদিকে চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের অপর একটি গ্রুপ বিজয়কে সমর্থন দিচ্ছেন।
এই দুই প্রার্থীর পক্ষে নিয়মিত প্রচার—প্রচারণা ও সমাবেশে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতাদের। জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলায়মানের পক্ষে প্রচারণায় আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকে দেখা যাচ্ছে না বলে জানান ভোটাররা।
চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট আওয়ামী লীগের সহ—সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন জানান, জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য দল তাদের কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তাই তিনি আবদুচ ছালামের পক্ষে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, ‘দল এই আসন থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করলেও নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থীর পক্ষে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করা হয়েছে, তা বলা হয়নি। এই আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী না থাকায় আমরা যে যার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।’
তবে সোলায়মানের দাবি, আওয়ামী লীগ নেতারা তার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমার জন্য এই আসন ছেড়ে দিয়ে তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তাই এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-৮ আসনে মোট ভোটার পাঁচ লাখ ১৫ হাজার ৬৪১। এরমধ্যে দুই লাখ ৫২ হাজার ৮৬৪ নারী এবং একজন ভোটার তৃতীয় লিঙ্গের।
বিশেষ প্রতিবেদন/এআর/আর এস