হঠাৎ করেই পোশাক কারখানা খোলার ঘোষণায় দেশের নানা প্রান্তের পোশাক শ্রমিক ও কর্মজীবীরা ঈদের ছুটি কাটিয়ে করোনাকে উপেক্ষা করে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েই রাজধানীর পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কজুড়ে বিভিন্ন স্থানে মানুষের জনস্রোত আর বেড়েছে দুর্ভোগ-ভোগান্তি।
এদিকে, টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় উত্তরাঞ্চলের ১৬ টি জেলার হাজার হাজার মানুষ পড়েন চরম বিপাকে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যবাহী খোলা ট্রাক, পিকআপ, মোটরসাইকেল যোগে সেতু পারাপার হচ্ছেন। অন্যদিকে, যমুনা নদীর নৌ পথর ঝুঁকি নিয়ে ও ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পাড় হয়ে ঢাকায় ফিরছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো।
শনিবার (৩১ জুলাই) ভোর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু রেল স্টেশন, এলেঙ্গা, টাঙ্গাইল বাইপাস, আশেকপুর, করটিয়া বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানে ঢাকামুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।
এছাড়া সেতু না দিয়ে পারাপার না হতে পেরে সিরাজগঞ্জের গোয়লার মতিয়ার নৌকা ঘাট থেকে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী পুরাতন ফেরিঘাট দিয়েও পার হচ্ছেন মানুষ। তবে নদী পথেও শান্তিতে পারাপার হতেও নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ঢাকামুখী মানুষদের।
জানা গেছে, জুলাই মাসের দ্বিতীয় দফায় লকডাউন শেষ হবে আগামী ৫ আগস্ট। এরমধ্যে হঠাৎ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো দেশে রপ্তানীমুখী শিল্প ও কলকারখানা খুলে দেয়া হবে। এরই খবর গত বৃহস্পতিবার পোশাক শ্রমিকদের মোবাইল ফোন বা এসএমএস করে জানানো রোববার (১ আগস্ট) থেকে অফিস চালু করা হবে। এমন সংবাদ পেয়েই আজ শনিবার (৩১ জুলাই) গ্রাম ছাড়ছেন কর্মজীবী মানুষ। তবে, গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে ছোট ছোট যানবাহনে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে পরিবহনগুলো।
অন্যদিকে, নানা শঙ্কা আর চাকরি হারানোর ভয়ে পায়ে হেঁটেই ঢাকার দিকে রওনা হয়েছেন মানুষ। তাদের লক্ষ্য একটাই রোববার (১ আগস্ট) সকালের মধ্যে কাজে যোগ দিতে হবে। আর রক্ষা করতে হবে চাকরি। তাদের মধ্যে একজন শায়লা বেগম। তিনি এসেছেন বগুড়া থেকে। কয়েকবার ধাপ যানবাহন পরিবর্তন করে অনেক কষ্টে স্বামী সন্তান নিয়ে যাবেন সাভার। তিনি বলেন- বগুড়ার বনানী থেকে গোবিন্দাসী নৌকাঘাটে আসতে তিনজনের খরচ হয়েছে ১ হাজার ৪৮০ টাকা। যেখানে খরচ হতো মাত্র ৩০০ টাকা সর্বোচ্চ।
নাটোর থেকে গাজীপুরমুখী পোশাক শ্রমিক শিউলী খাতুন, সাদিয়া আক্তার ও সমুন বলেন- বনপাড়া থেকে সকাল ৭ টায় সিএনজিযোগে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত তিনজন আসছি ১ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়ায়। এখন সেতু পাড় হবো কিভাবে। দুপুর পর্যন্ত কোন পরিবহন না পেয়ে বাধ্য হয়ে ভরা নদীপথে নৌকাযোগে ভূঞাপুরের সিরাজকান্দি নেংড়া বাজার ঘাটে নেমেছি ৩৫০ টাকা ভাড়ায়। দ্বিগুণ ভাড়া অসহ্য ভোগান্তি কেন দিচ্ছেন তারা। তারা জানান, গণপরিবহন খুলে দিতে তাদের কিসের এত সমস্যা। করোনা কি শুধু বাসের মধ্যে থাকে। সেতু থেকে গাজীপুর চন্দ্রা যেতে জানিনা আর কয় হাজার টাকা খরচ হবে।
জামালপুর থেকে আসা বিথী আক্তার জানান জানান, আশুলিয়া যেতে হবে। আগামীকাল কাজে যোগ না দিলে চাকরি থাকবে না। এলেঙ্গাতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম কোন যানবাহন পায়নি। আর যা দুয়েকটা পাওয়া যায় তাতে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া চাচ্ছে। এ কারণে বাধ্য হয়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছি। রাস্তায় কোন যানবাহন পেলে তাতে উঠে পড়বো। হেঁটে যতটুকু এগিয়ে থাকা যায়।
তিনি আরও জানান, ট্রাকেও অনেক বেশি ভাড়া চায়। আর অন্য গাড়িগুলো ১০ থেকে ১২ গুন বেশি ভাড়া চাচ্ছে। তাই হেঁটেই ঢাকা যাচ্ছি। চাকরি বাঁচাতেই হবে। চাকরি হারালে কি করে চলব বলেন আপনারাই। তাই শেষমেষ কোন উপায় না পেয়ে বাড়তি ভাড়াতেই ছুটছি। এ বিষয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত ও বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলামের সঙ্গে সকালে যোগাযোগ করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।