13.4 C
Chittagong
শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদঅর্থ-বাণিজ্যকর-ভ্যাটের চাপ: বাড়তে পারে যেসব পণ্যের দাম

কর-ভ্যাটের চাপ: বাড়তে পারে যেসব পণ্যের দাম

অর্থনীতি ডেস্ক :

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্ক সেবার ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আগে এই সেবার বিপরীতে ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৭.৫ শতাংশ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। নিজের বাড়ি বানানোর স্বপ্ন থাকলেও ভ্যাটের খড়্গে সেই স্বপ্ন পূরণে গুনতে হবে বাড়তি টাকা।

বাড়ি তৈরির অন্যতম উপকরণ ইট কিনতে গেলে ব্যয় করতে হবে আগের চেয়ে বেশি টাকা। বর্তমানে প্রতি এক হাজার পিস ইটে ৪৫০ টাকা ভ্যাট দিতে হয়। এবার তা বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হচ্ছে। সে হিসাবে প্রতিটি ইটে খরচ বাড়বে পাঁচ পয়সা।

সূত্র জানিয়েছে, পরিবেশবান্ধব অটোব্রিকস ইটের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ভ্যাট বাড়ানো হয়নি। তবে রড, বার, অ্যাঙ্গেলের কাঁচামাল ম্যাঙ্গানিজ আমদানিতে করভার ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩১ শতাংশ করা হচ্ছে প্রস্তাবিত বাজেটে।

এ কারণে সরকারি উন্নয়নকাজে ঠিকাদার ও বাড়ি নির্মাণে ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যয় বাড়বে। দেশে উৎপাদিত রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, এলইডি বাল্ব, টিউব লাইট—এসব পণ্যের ওপর বসছে বাড়তি ভ্যাটের বোঝা।

এলইডি বাল্ব ও টিউব লাইটের বর্তমান ভ্যাট হার ৫ শতাংশ। এবারের বাজেটে রেফ্রিজারেটর ও এয়ারকন্ডিশনারে শূন্য শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ এবং এলইডি বাল্ব ও টিউব লাইটে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। দেশের বাজারের পাশাপাশি আমদানি করা এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটরেও বাড়ানো হয়েছে আমদানি শুল্ক।

এ ছাড়া আমসত্ত্ব, বিভিন্ন রকম জুসের (আম, আনারস, পেয়ারা, তেঁতুল) ভ্যাটহার একইভাবে ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে এসব পণ্য কেনায় ব্যয় বাড়বে।

বর্তমানে সিগারেটের রোলিং পেপারের ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ, নিলামকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ, সিকিউরিটিজ সার্ভিসে ১০ শতাংশ ও কন্ট্রাক্টর সেবার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ভ্যাট বহাল আছে। এসব বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

আইসক্রিমে এবারের বাজেটে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর বর্তমানে সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ। এটা বেড়ে ৩০ শতাংশ হচ্ছে।

বর্তমানে মোবাইল ফোনে কথা বলায় ১৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আছে। এর সঙ্গে ভোক্তাদের ১ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়।

আসন্ন বাজেটে আরো ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে মোবাইল সেবার দাম বাড়তে পারে। মোবাইলের সিম কার্ডের ওপর ভ্যাট ২০০ টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে ৩০০ টাকা।

বাজেটে জনস্বাস্থ্য ও রাজস্ব আয় মাথায় রেখে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়ানো হচ্ছে। নিম্নস্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের (ডার্বি, হলিউড) দাম হবে ১০০ টাকা, মধ্যম স্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের (স্টার, নেভি) দাম হবে ১৪০ টাকা, উচ্চস্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের (গোল্ডলিফ) দাম হবে ২৪০ টাকা ও অতি উচ্চস্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের (বেনসন, মালবোরো) সিগারেটের দাম হবে ৩২০ টাকা।

নিম্নস্তরের সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ৫৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ৬০ শতাংশ। অন্যান্য স্তরে এই শুল্ক ৬৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ৬৫.৫ শতাংশ।

বাড়ছে জর্দা-গুলের দামও। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৮ টাকা ও প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরিবর্তিত থাকছে বিড়ির দাম।

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আমদানির বিকল্প পণ্য উৎপাদন এবং দেশি শিল্প বিকাশের জন্য কিছু পণ্যের ওপর রেয়াতি সুবিধা আরো এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে আগামী বাজেটে।

এগুলো হচ্ছে মোবাইল টেলিফোন সেট বা সেলুলার ফোন, পলিপ্রপাইলিন স্ট্যাপল ফাইবার, স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপার, এলপিজি সিলিন্ডার ও এলএবিএসএ এবং এসএলইএস।

পরিবর্তন আসছে ব্যাংকে জমা টাকার ওপর আবগারি শুল্কের স্তর ও হারে। এতে ব্যাংকে জমা টাকা রাখার খরচ বাড়ছে। তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ছোট আমানতকারীদের ওপর পড়বে না।

এক লাখ টাকা পর্যন্ত শূন্য, এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫০ টাকা, ১০ লাখ থেকে ৫০ লাখ পর্যন্ত তিন হাজার, ৫০ লাখ থেকে এক কোটি পর্যন্ত পাঁচ হাজার টাকা, এক কোটি থেকে দুই কোটি পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা, দুই কোটি থেকে পাঁচ কোটি পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা এবং পাঁচ কোটির বেশি ৫০ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হবে।

বর্তমানে অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল ও আপিল কমিশনারেটে আপিলের ক্ষেত্রে দাবি করা করের ২০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করতে হয়। এবার এই পরিমাণ কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে।

ভ্যাট হচ্ছে পরোক্ষ কর। সহজভাবে বলা যায়, কোনো ক্রেতা যখন পণ্য বা সেবা কেনেন, তার মূল্যের অতিরিক্ত যে কর তিনি দিয়ে থাকেন, সেটিই ভ্যাট। কোনো পণ্য বা সেবার সর্বশেষ ভোক্তা বা ক্রেতাই সেই পণ্য বা সেবার মূসকদাতা।

আর এই ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার দায়িত্ব বিক্রেতার। পরোক্ষ করের হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভাব সমাজের প্রতিটি শ্রেণির মানুষের ওপর পড়ে।