15.1 C
Chittagong
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদআন্তর্জাতিকছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে শরীর, শনাক্ত করা যাচ্ছে না বহু মরদেহ

ইসরায়েলি হামলা: ২৪ ঘন্টায় আরও ৬৮ জন নিহত

ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে শরীর, শনাক্ত করা যাচ্ছে না বহু মরদেহ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ গাজা উপত্যকায় জাতিসংঘের ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েও রক্ষা পায়নি শরণার্থী শিবির।

সেখানেও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। নিহত হয়েছে অন্তত ৪০ জন। আহত হয়েছে আরও শতাধিক। হামলার কথা স্বীকারও করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ভয়াবহ হামলায় অনেকের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। অনেক মরদেহ শনাক্ত করার অবস্থায় নেই। এর আগে অনেক ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হামলার পর এমন বীভৎস দৃশ্য তারা আগে দেখেনি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এর আগে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে রাতভর তাণ্ডব চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ক্যাম্পের একটি আবাসিক বাড়িতে বোমাবর্ষণ করলে সেটি ধসে অন্তত ছয় ফিলিস্তিনি নিহত হয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার ২৪ ঘণ্টায় নুসেইরাতসহ অঞ্চলটির বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছে ৬৮ জন। আহত হয়েছে ২৩৫ জনের বেশি। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।

এদিকে জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটির প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, হামলার আগে ইসরায়েল সাধারণ মানুষজনকে কোনো ধরনের সতর্কতা দেয়নি। অথচ ওই শরণার্থী শিবিরে প্রায় ছয় হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, জাতিসংঘের অবকাঠামোয় হামলা চালানো কোনোভাবেই বৈধ বিষয় হতে পারে না। এটি আন্তর্জাতিক সব মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী। অবশ্য জাতিসংঘের কোনো স্থাপনায় সন্ত্রাসীরাও আশ্রয় নিতে পারে না। জাতিসংঘ এলাকায় জাতিসংঘের কর্মী, স্থাপনা সবসময়ই নিরাপদ থাকতে হবে।

তবে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, স্কুলটিতে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারা অবস্থান করছিল। সেখানে হামলা চালিয়ে ৭ অক্টোবরের হামলার সঙ্গে জড়িত যোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছে; যে হামলাটি আট মাস ধরে চলা যুদ্ধের সূচনা ঘটিয়েছিল।

আর ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, যুদ্ধবিমানগুলোর হামলার আগে ইসরায়েলে সামরিক বাহিনী বেসামরিকদের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে পদক্ষেপ নিয়েছিল।

তবে ওই স্কুলে হামাসের একটি লুকানো কমান্ড পোস্ট ছিল, ইসরায়েলের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন গাজার হামাস পরিচালিত সরকারের তথ্য দপ্তরের পরিচালক ইসমাইল আল-থাওয়াবেত।

রয়টার্সকে তিনি বলেন, দখলদাররা কয়েক ডজন বাস্তুচ্যুত মানুষের বিরুদ্ধে চালানো নৃশংস অপরাধকে বৈধতা দিতে মিথ্যা বানানো গল্পের মাধ্যমে জনমতের কাছে মিথ্যা কথা বলে।

এদিকে হামাস বলছে, গাজায় যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি এবং তাদের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত হওয়ার জন্য ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা প্রধান বলেছেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনার সময় হামলা থামানো হবে না।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, যদি হামলা অব্যাহত থাকে তবে গাজায় খাদ্যসংকট আরও তীব্র হবে। সেখানকার ১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই তীব্র অনাহারের মধ্যে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডবে প্রতিদিনই নিরীহ ফিলিস্তিনিরা প্রাণ হারাচ্ছে। নারী, পুরুষ এমনকি ছোট ছোট শিশুরাও এসব হামলা থেকে বাঁচতে পারছে না। গাজায় কোনো স্থানই এখন আর বসবাসের যোগ্য নেই।

প্রায় সব স্থানেই হামলা চালিয়ে অবরুদ্ধ এ উপত্যকাকে যেন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গত আট মাসে সেখানে ৩৫ হাজার ৬৫৪ জন নিহত হয়েছে। আহত মানুষের সংখ্যা ৮৩ হাজার ৩০৯ জন।