পাকিস্তানিরা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেনি তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হেরে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তাই হলো। পরাজয়েই বিশ্বকাপ মিশন শুরু হলো সাবেক চ্যাম্পিয়নদের।
বাংলাদেশকে সিরিজে হারানো ও কানাডাকে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই উড়িয়ে দেয়ার ঘটনা যে নিছকই কোনো অঘটন ছিল না, সেটি প্রমাণ করল যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ মঞ্চে মাটিতে নামিয়ে এবার তাক লাগিয়ে দিল দেশটি।
ডালাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচে চরম রোমাঞ্চ ছড়ায়। পাকিস্তানকে মাত্র ১৫৯ রানে আটকে রেখে জয়ের প্রাথমিক কাজ করে রেখেছিল তারা। ব্যাটিংয়েও দারুণ জবাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
একটা সময়ে মনে হচ্ছিল জয়টা সহজেই চলে আসবে। কিন্তু পাকিস্তান শেষ দিকে ম্যাচে ফিরে যুক্তরাষ্ট্রকে চেপে ধরে। আফ্রিদি, হারিস ও আমিরের তোপে দিশেহারা হয়ে পড়েন তারা।
কিন্তু আশা না ছেড়ে লড়াই করা যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত ম্যাচ টাই করে। শেষ ওভারে মিলিয়ে ফেলে ১৫ রানের সমীকরণ। তাতে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
সেখানে আগে ব্যাটিং করে যুক্তরাষ্ট্র ১ উইকেটে ১৮ রান করে। পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালালেও ১৩ রানের বেশি করতে পারেনি। ৫ রানের জয়ে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো তারা আইসিসির পূর্ণ সদস্য দলকে হারানোর স্বাদ পেল। অন্যদিকে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান এই ফরম্যাটে প্রথমবার হারল আইসিসির সহযোগী দেশের বিপক্ষে।
সুপার ওভারে বল হাতে আমির ছিলেন ভরসা। কিন্তু তালগোল তিনিই পাকান। ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হজম করেন। পরে অবশ্য দারুণভাবে ফিরে আসলেও তিন ওয়াইড ও চার বাই রান, সিঙ্গেল ও ডাবলসে ১৮ রান খরচ করেন। প্রথম বলে বাউন্ডারির পর বাকি পাঁচ বলে কোনো বাউন্ডারি আসেনি। তারপরও রান ১৮! মাত্র ১০ রান আসে ব্যাট থেকে। বাকিটা অতিরিক্ত।
১৯ রান তাড়ায় পাকিস্তানের শুরুটা হয়েছিল ডট দিয়ে। পরের বলে ইফতেখার বাউন্ডারি আদায় করে নেন। পরের বল ছিল ওয়াইড। বৈধ তৃতীয় বলে ইফতেখারকে ড্রেসিংরুমের পথ দেখান পেসার নেত্রাভালকার।
জয়ের জন্য শেষ ৩ বলে দরকার ছিল ১৪ রান। পরের বল আবার ওয়াইড। চতুর্থ বলে শাদাবের ব্যাটের নিচে দিয়ে বল চলে যায় বাউন্ডারিতে। পঞ্চম বলে ২ রান আসলে যুক্তরাষ্ট্রের জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। কারণ শেষ বলে ছক্কা হলে আবার ম্যাচ টাই।
কিন্তু নেত্রভালকারের ওয়াইয়ড ইয়ার্কার থেকে ১ রানের বেশি আদায় করতে পারেননি শাদাব। বল ফিল্ডারের হাতে যাওয়ার আগেই গ্যালারি ফেটে পড়ে। উল্লাসে মিলিয়ে যায় খেলোয়াড়রাও। বলার অপেক্ষা রাখে না, বৈশ্বিক মঞ্চে পাকিস্তানকে হারানো তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সাফল্যই হয়ে থাকবে।
এর আগে ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মত। পাওয়ারপ্লেতেই ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান তুলে।
দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেওয়ার মূল কৃতিত্ব বাবর আজম ও শাদাব খানের।২৬ রানে তিন উইকেট হারানো পর চতুর্থ উইকেটে এই দুজনে মিলে ৪৮ বলে যোগ করেন ৭২ রান।
ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে শুরু থেকে চাপে রাখে যুক্তরাষ্ট্রের পেসাররা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ব্যক্তিগত ৯ রান করে ফেরেন রিজওয়ান।তিন নামে উসমান খান ফিরেছেন ৩ রান করে।সুবিধা করতে পারেননি ফখর জামানও( ৭ বলে ১১ রান)।
পাওয়ারপ্লেতে পাকিস্তান ৩ উইকেটে হারিয়ে তুলতে পেরেছে কেবল ৩০ রান।যার মধ্যে ১৪ বল খেলে মাত্র ৪ রান করেন বাবর। চাপ সামলে ধীরে ধীরে অবশ্য দুইজনই হাত খুলে খেলতে শুরু করেন। ৯ ওভারে ৪৬ রান থাকা পাকিস্তান বাবর-শাদাবের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে পরের চার ওভারে যোগ করেন ৫২ রান।দলীয় ৯৮ রানের মাথায় ভাঙে এ দুজনের ৭২ রানের জুটি।
তবে ক্রিজে আজম খান প্রথম বলেই ডাক মেরে ফিরলে চাপ বাড়ে পাকিস্তানের উপর।সেখান থেকে দলকে একাই টেনে নেন বাবর।
১২৫ রানে ফিরে যান তিনিও। দুটি ছক্কা ও তিন চারে ৪৩ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। শেষদিকে ১৫ বলে ২৩ রান আসে শাহিন শাহ আফ্রিদির ব্যাট থেকে। এছাড়া ১৪ বলে ১৮ রান করেন ইফতেখার আহমেদ।
যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে নশতুশ কেনজিগে তিনটি এবং পাওয়ারপ্লে দুর্দান্ত এক স্পেল উপহার দেওয়া সৌরভ নেথ্রালভাকার দুটি উইকেট নেন।
জবাব দিতে নেমে স্টিভেন ও মোনাক প্যাটেল উইকেট বাঁচিয়ে খেলেছেন দেখেশুনে। পাকিস্তানের তিন তারকা পেসারদের সামলে প্রথম পাঁচ ওভারে দুজনে মিলে তুলেন ৩৬ রান।
ষষ্ঠবারের প্রথম বলে স্টিভেনকে(১৬ বলে ১২ রান) উইকেট কিপারের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান নাসিম শাহ। প্রথম ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৪৪ রান তোলে আমেরিকা। দুই উইকেট বেশি হারিয়ে যেখানে পাকিস্তান তুলেছিল কেবল ৩০ রান।
দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে মোনাকের সঙ্গে আন্দ্রিস গাউস মিলে যুক্তরাষ্ট্রকে জয়ের পথে রাখেন। দুজনে মিলে ৪৮ বলে গড়েন ৬৮ রানের জুটি। ১৪ তম ওভারে দারুণ এক বলে গাউসকে বোল্ড করেন হারিস রউফ। এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান করেন ২৬ বলে ৩৫ রান।
তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে এগিয়ে নেন মোনাক। পূর্ণ করেন ফিফটি। তবে এরপরই আমিরের বলে আউট হয়ে ফিরেন। তবে এরপরও ম্যাচের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল স্বাগতিকদের। জয়ের জন্য ২৪ বলে প্রয়োজন ছিল ৩৫ রান। দারুন বোলিংয়ে পাকিস্তান ম্যাচে ফিরলেও শেষ রক্ষা হয়নি।