মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যের একটি গ্রামে ঢুকে অন্তত ৫০ জনকে হত্যা করেছে। গত সপ্তাহে তারা এ হত্যাকাণ্ড চালায় বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিরোধী বাহিনীগুলো।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে জানিয়েছে, দু’তিন দিন ধরে গ্রামটিতে তাণ্ডব চালিয়েছে সেনারা। গ্রামের মানুষদের চোখ বেঁধে মারধর করেছে। তাদের কারও কারও শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়েছে। আবার কাউকে প্রস্রাব পান করতে বাধ্য করেছে।
তারা আরাকান আর্মি ( এএ) এর সমর্থকদের খুঁজতে গ্রামটিতে ঢুকেছিল। আরাকান আর্মির সদস্যরা বর্তমানে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইরত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর।
১৫ থেকে ৭০ বছর বয়সী ৫১ জন বেসামরিক নাগরিককে সহিংস নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী।
মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
তবে আরাকান আর্মি বলছে, নিহতের সংখ্যা ৭০ জনের বেশি বলে ধারণা প্রকাশ করেছে। মিয়ানমার জান্তা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এক নারী বিবিসিকে বলেন, “তারা (সেনা) পুরুষদের জিজ্ঞাসা করছিল যে, আরাকান আর্মির সদস্যরা গ্রামে আছে কি না। লোকজন প্রশ্নের উত্তরে যদি বলেছে যে, তারা জানে না বা আরাকান আর্মির সদস্যরা গ্রামে আছে বা নেই- তারা যে উত্তরই দিয়েছে তাতেই সেনারা তাদেরকে মারধর করেছে। ”
মাত্র ছয় মাসেই রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ এলাকা দখল করেছে আরাকান আর্মি। তারা সেনাবাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও আরকান আর্মির (এএ) মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ছিল। গত বছর সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় এএ। দেশের অন্যান্য অংশে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগ দেয় তারা।
এভাবে একজোট হয়ে তারা হামলা চালাচ্ছে ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে। এতে ক্রমশই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে জান্তা বাহিনী।
রাখাইনের ওই নারী বিবিসি-কে বলেন, “আমার স্বামীকে জোর করে একটি সাঁজোয়া গাড়িতে তোলা হয়। আমি নিজের চোখে সেটি দেখেছি। আমার সন্তানকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। আমি জানি না, সে এখন কোথায় আছে। আমি জানি না, আমার, স্বামী-সন্তান বেঁচে আছে কি না। ’
প্রত্যক্ষদর্শীদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে বিবিসি তাদের নাম প্রকাশ করেনি। তারা বিবিসি-কে বলেছেন, গ্রামটিতে এক হাজারের কিছু বেশি পরিবারের বাস। তাদের সবাইকে দুইদিন খোলা আকাশের নিচে রোদের মধ্যে বেঁধে রাখা হয়।
গরমে পিপাসার্ত লোকজন পানি পান করতে চাইলে সেনারা তাদেরকে পানির বোতলে করে মূত্র পান করিয়েছে। চোখ বেঁধে কয়েকজনকে সাঁজোয়া যানে করে নিয়েও যাওয়া হয়। এর মধ্যে অনেকেই এখনও ফিরেননি।