গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোহিঙ্গা যুবক আলী জোহার (৩০)।
তার দাবি, বৃহস্পতিবার ( ১৩ জুন) সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলারযোগে ফেরার পথে মিয়ানমার থেকে আকস্মিক ছোঁড়া গুলিতে তিনি আহত হন। কিন্তু এ ঘটনা নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে সাধারণের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্ট দিয়ে সেন্টমার্টিন থেকে কোনো ট্রলার টেকনাফে আসেনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে কৌশলে পালিয়ে এসে চিকিৎসার জন্য মিথ্যাচার করছেন ওই রোহিঙ্গা যুবক।
গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা যুবক আলী জোহারের দেওয়া তথ্য মতে, তার বাবার নাম হামিদ হোসেন। তিনি উখিয়ার কুতুপালং ৩ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে থাকেন।
গত ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে সপরিবারে কক্সবাজারের উখিয়ায় আশ্রয় নেন তিনি।
শুক্রবার (১৪ জুন) রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আলী জোহার বলেন, বৃহস্পতিবার সেন্টমার্টিন থেকে চারটি ট্রলারে দ্বীপে আটকাপড়া লোকজনকে টেকনাফে নিয়ে আসা হয়।
কিন্তু এ সময় চারটি ট্রলারে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ওইদিন বিকেলে ৩০ জন মিলে একটি কাঠের ট্রলার ভাড়া করেন।
ট্রলারটি শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাশ দিয়ে টেকনাফে ওঠার কথা থাকলেও মাঝি সেটা না মেনে শাহপরীর দ্বীপের পূর্বপাশের ঘাটের দিকে চলে যান।
তিনি বলেন, এ সময় আকস্মিক মিয়ানমার জলসীমা থেকে দুটি ট্রলার বের হয়ে তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। একটি গুলি এসে লাগে তার ডান পায়ে লাগে।
আলী জোহারের দাবি, নাফ নদীর ৫ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে তাদের ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়। গুলি লাগার পর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। তারপর জ্ঞান হারান।
জ্ঞান ফিরলে দেখেন, তিনি উখিয়ার এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখান থেকে শুক্রবার দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।
একমাস আগে রোহিঙ্গা শিবির থেকে কাজের জন্য সেন্টমার্টিনে যান দাবি করেন জোহার।
তবে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও স্পিডবোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, বৃহস্পতিবার চারটি ট্রলার ছাড়া আর কোনো ট্রলার টেকনাফে যায়নি। এছাড়া গুলির মুখে কোনো ট্রলার নাফ নদী হয়ে টেকনাফ যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আলী জোহার হয়ত মিথ্যা বলছেন।
টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি বলেন, বৃহস্পতিবার বোটমালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমেদের মালিকানাধীন ৪টি ট্রলারে করে প্রায় ৩০০ মানুষ বঙ্গোপসাগর হয়ে টেকনাফে পৌঁছানো হয়। এর বাইরে আর কোনো ট্রলার নাফ নদী কিংবা বঙ্গোপসাগর হয়ে টেকনাফে আসেনি।
সব মাধ্যম থেকে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, হয়ত মিয়ানমার অভ্যন্তরে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন ওই যুবক। এখন চিকিৎসা নেওয়ার জন্য মিথ্যাচার করছেন।
একই কথা বললেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন। তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে ৪টি ট্রলার ছাড়া আর কোনো ট্রলার টেকনাফে আসেনি।
এছাড়া সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলারযোগে টেকনাফ আসার পথে গুলিবিদ্ধ হয়েছে এই ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।