28.9 C
Chittagong
শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪
spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদঅর্থ-বাণিজ্যঅর্থ পাচার থামান,ঘুরে দাঁড়াবে দেশ!

অর্থ পাচার থামান,ঘুরে দাঁড়াবে দেশ!

জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে যে কোনো উপায়ে অর্থ পাচার থামানোর তাগিদ দিয়েছেন সংসদ সদস্যরা।

বিদেশে টাকা পাচারকারী ও কালো টাকার মালিকদের দুষ্কৃতকারী আখ্যা দিয়ে সংসদ সদস্যরা বলেছেন, দুর্নীতিবাজ কিছু আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী বাংলাদেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছেন। প্রধানমন্ত্রী ও সরকার তাদের অপকর্মের দায় নিতে পারেন না। তাদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিদেশে অর্থ পাচার ও হুন্ডি থামাতে পারলে তিন মাসেই দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।

একই সঙ্গে কালো টাকার (অপ্রদর্শিত আয়) পাশাপাশি ‘গ্রে মানি’ (নজরদারির বাইরে থাকা অর্থ) বৃদ্ধি বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। সংসদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

প্রস্তাবিত বাজেটে কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার সমালোচনা করে সরকারদলীয় এমপি প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, ‘একজন করদাতা হিসেবে আমার ৩০ লাখ টাকা থাকলে ৩০ শতাংশের বেশি কর দিতে হচ্ছে।

কিন্তু যিনি গত বছর টাকা দেখাননি, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সেই অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ করে নিচ্ছেন। এতে করে সঠিক করদাতারা কর দিতে অনিচ্ছা পোষণ করবেন।’

কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ভিসি বলেন, ‘সবচেয়ে ব্যয়বহুল হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। যেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা উপকরণের দাম আকাশচুম্বী। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতে, শিক্ষা ও চিকিৎসা থাকা উচিত সরকারি খাতে।

একে বেসরকারীকরণ করা হলে শিক্ষা ও চিকিৎসার কোনো গুণগত মানের পরিবর্তন হয় না, তখন সেটা হয়ে যায় একটা পণ্য। এখন পৃথিবীজুড়ে এটা পণ্য হয়ে গেছে।

সেক্ষেত্রে আপনার টাকা আছে চিকিৎসা পাবেন, টাকা না থাকলে চিকিৎসা পাবেন না। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য দেখার কেউ নেই।’

যশোর-৬ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকার টাকা পাচার, হুন্ডি বন্ধ করে দিতে পারলে তিন মাসের মধ্যে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। হুন্ডির সঙ্গে যোগ হয়েছে অনলাইন জুয়া।

কয়েক বছর আগে অভিযানে ঢাকার ক্যাসিনো বন্ধ হলেও অনলাইনে অসংখ্য বেটিং সাইট চালু হয়েছে। ঘাম ঝরিয়ে আয় করা টাকা এসব জুয়ার সাইটে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ।

অনেক পরিবার ভেঙে যাওয়া, আত্মহত্যা, অর্থনীতির ভগ্নদশার জন্য এই অনলাইন জুয়া দায়ী। সব দেখেও আমরা চুপ থাকছি। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে এই অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে। এগুলো বন্ধের ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

অভিজাতরাই কালো টাকার মালিক-এমন মন্তব্য করে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘কোটি কোটি কৃষক কালো টাকার মালিক নন, যারা শিল্প-কলকারখানা তৈরি করেন, তারা কালো টাকা তৈরি করেন না। প্রবাসীরা কালো টাকার মালিক নন, অভিজাতরাই কালো টাকা তৈরি করেন। কালো টাকার বিষয়ে নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের যে টাকা বিদেশে চলে গেছে, তা যদি আনা যেত; তাহলে দেশের অর্থনীতি ভালো হতো। অর্থনীতি কিছুটা হলেও চাঙ্গা হতো। কালো টাকা কমাতে হলে দুর্নীতি কমাতে হবে, ট্যাক্স কমাতে হবে। তবেই কালো টাকা জন্ম নেবে না। আর কালো টাকার জন্ম না নিলে টাকা পাচারও হবে না।’

সিলেট-৬ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা খাতেও সাফল্য অসামান্য। ২০০৬ সালে যেখানে সাক্ষরতার হার ছিল ৪৫ শতাংশ, ২০২৩ সালে সেটা হয়েছে ৭৬.৮ শতাংশ।

প্রাথমিক শিক্ষায় মেয়েদের হার ছিল ৫৪ শতাংশ, বর্তমানে তা ৯৮.২৫ শতাংশ। কারিগরি শিক্ষার হার ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ, বর্তমানে সেটা বেড়ে হয়েছে ১৭.৮৮ শতাংশ।

এবারের বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান গবেষণা, প্রযুক্তির পাশাপাশি বিনিয়োগ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো গড়ায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রতি বছর সিলেট বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের স্বতন্ত্র এমপি মঈন উদ্দিন বলেন, ‘কতিপয় দুর্নীতিবাজ আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীর জন্য বাংলাদেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। কানাডার বেগম পাড়ায়, আবুধাবি, মালয়েশিয়ায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এ অপকর্মের দায় নিতে পারেন না।

যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে চায়, তাদের দায়দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভা এবং এ সংসদ নিতে পারে না। বৈধ রেমিট্যান্সের মাধ্যমে যাতে এ টাকা ফেরত আসে, সে উদ্যোগ নিতে নিতে হবে।

বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপ, যা সব নাগরিকের অবসরকালীন আর্থিক মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত হবে।

এই ব্যবস্থার বিস্তারিত তুলে ধরে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার পঞ্চম স্কিম হিসেবে ‘প্রত্যয়’ ঘোষণা করেছে। সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী—যারা আগামী ১ জুলাই যোগ দেবেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি বাধ্যতামূলকভাবে কার্যকর হবে।’

কৃষিমন্ত্রী ও মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুস শহীদ বলেন, অর্থমন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য যে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছেন তা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কৃষি খাত অর্থনীতির অন্যতম বড় খাত।

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন খাদ্যের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। নিজেদের খাদ্য আমাদেরই উৎপাদন করতে হবে। কৃষকদের বাঁচাতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। না হলে বাংলাকে বাঁচানো যাবে না।

২০২৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে ১১টি বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে কৃষিও রয়েছে। কৃষি খাত যান্ত্রিকীকরণের কারণে এবার বোরোতে এক ছটাক ধানও নষ্ট হয়নি।