23.2 C
Chittagong
সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪
spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদজাতীয়টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না! শিক্ষায় দুর্নীতি

টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না! শিক্ষায় দুর্নীতি

অপরাধ ডেস্ক :

সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি, আদালতে বিচারকের অভাব ও বিচারপ্রার্থীদের নানারকম হয়রানি এবং শিক্ষা খাতের সর্বগ্রাসী অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সংসদে ক্ষোভ ঝাড়লেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) এক জন ও স্বতন্ত্র চার জন সংসদ সদস্য।

তাদের কেউ বলেছেন, শিক্ষা খাতে টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না, টেবিলে টেবিলে টাকা দিতে হয়। কেউ বলেছেন, শিক্ষায় কেবল ভবন হয়েছে, কিন্তু শিক্ষার মানে বদল হয়নি।

আদালত নিয়ে তারা বলেছেন, বিচারের জন্য এ দরজা ঐ দরজা ঘুরতে ঘুরতে মানুষের জীবন শেষ।

গতকাল রবিবার সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি দাবির বিরুদ্ধে ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এভাবে তোপ দাগান।

শিক্ষার দুর্নীতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, টাকা ছাড়া কিছুই হয় না: স্বতন্ত্র এমপি আবুল কালাম
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মঞ্জুরি দাবির বিরুদ্ধে ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় নাটোর-১ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবুল কালাম বলেন, সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি। শিক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতি, এটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

টাকা দেওয়া ছাড়া কোনো শিক্ষক অবসরভাতা পাচ্ছেন না। আমার শ্যালক শিক্ষক ছিলেন, মারা গেছেন। আমি নিজে তিন বছর তদবির করলেও অবসর ভাতা পাননি। টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। এটা সর্বগ্রাসী দুর্নীতি। এ দুর্নীতির কারণে গোটা জাতি গ্রাস হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষিত বেকার যুবকরা আত্মহত্যা করছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে আবুল কালাম বলেন, রেলের খালাসি পদে ২ হাজার ১০০ ছেলেমেয়ের চাকরি হয়েছে, যাদের সবাই অনার্স-মাস্টার্স পাশ। এটা খুবই কষ্টের বিষয়। আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাড়ানোর পক্ষে।

কিন্তু আগামী অর্থবছরে কমপক্ষে ৫ লাখ অনার্স-মাস্টার্স পাশ ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে কোনো শিক্ষিত বেকার না থাকে।

শিক্ষার মাঠ কর্মকর্তারা নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত: স্বতন্ত্র এমপি হামিদুল হক খন্দকার
কুড়িগ্রাম-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হামিদুল হক খন্দকার বলেন, শিক্ষায় বরাদ্দ সব সময় জিডিপির লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে থাকে। শিক্ষাব্যবস্থায় বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, বৈষম্য লেগেই আছে।

এখানে প্রাতিষ্ঠানিক, শিক্ষাক্রম ও আঞ্চলিক বৈষম্য রয়েছে। মাঠপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা একই কর্মস্থলে পাঁচ-সাত বছর থেকে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকেন।

এমপিদের সবাই অপমান করে খুব উত্সাহ বোধ করেন: স্বতন্ত্র এমপি পঙ্কজ নাথ
বরিশাল-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ বলেন, এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রশংসনীয়। তবে কুড়িগ্রামের চিলমারীর কেউ যদি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে নিয়োগ পান, তাহলে তিনি যোগদান করেন না।

পার্বত্য এলাকায় আরও সমস্যা। এ কারণে শিক্ষক নিয়োগের পরও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ নিয়োগ অঞ্চলভিত্তিক করার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

সংসদ সদস্যদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সভাপতি হওয়ার বিষয়ে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে কি না, তা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়ে পঙ্কজ নাথ বলেন, হাইকোর্ট এমপিদের সভাপতি হতে বারণ করলেন।

বারবার এমপিরা এটা নিয়ে কথা বলেছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন আপিল করবেন। আসলে এমপিদের সবাই অপমান করে, এমপিদের অসম্মান করতে খুব উৎসাহ বোধ করেন।

জানি না হাইকোর্টের ঐ আদেশের বিরুদ্ধে আদৌ আপিল করেছেন কি না? আজ তিনি মন্ত্রী, কাল কোনো কারণে যদি মন্ত্রী না হন, তাহলে তার অবস্থাও আমার মতো হবে।

এমপিওভুক্তির জন্য টেবিলে টেবিলে টাকা দিতে হয়: জাপার এমপি হাফিজ উদ্দিন
জাপাদলীয় সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ভবন হয়েছে, কিন্তু শিক্ষার মানের পরিবর্তন হয়নি। আমার নির্বাচনি এলাকায় একটি সরকারি বিদ্যালয়ে ৪৩টি শ্রেণিকক্ষ আছে। পাঠদান হয়নি পাঁচটিতেও। এই যে অপব্যয়। আমার পাকা বাড়ি, পাকা পায়খানা, কিন্তু খাবার নেই। এটা হচ্ছে আজকের শিক্ষার অবস্থা।

তিনি বলেন, এমপিওভুক্তির আবেদন নেওয়া বন্ধ আছে। এমপিওভুক্তির জন্য বিভিন্ন টেবিলে যেতে হয়, টাকা দিতে হয়। ধাপে ধাপে টেবিল মানে ধাপে ধাপে দুর্নীতি। ঝিনাইদহ-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নাসের শাহরিয়ার জাহেদী প্রশাসনিক ব্যয় কমিয়ে শিক্ষা গবেষণায় ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।

এমপিদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে না পারার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হবে: শিক্ষামন্ত্রী
সংসদ সদস্যদের এসব বক্তব্যের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। দূরবর্তী জায়গায় অনেকে যোগদান করেন না, এটা ঠিক। তারপরও গত ছয় মাসে ৯৯ হাজার শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

আইন সংশোধনের মাধ্যমে সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সংসদ সদস্যদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি হতে না পারা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষামন্ত্রী তার বক্তব্যে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলেননি।

বিচারের জন্য এ দরজা ঐ দরজা ঘুরতে ঘুরতে মানুষের জীবন শেষ: জাপার এমপি হাফিজ
আইন মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানদের অধিকার রক্ষায় একটি কমিশন গঠনের দাবি জানান।

জাপার এমপি হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বিচারকের অভাব রয়েছে। বিচারের জন্য এ দরজা ঐ দরজা ঘুরতে ঘুরতে মানুষের জীবন শেষ। প্রতিটি বিভাগে হাইকোর্টের বেঞ্চ করার দাবি জানান তিনি।

সুন্দর সুন্দর ভবন হয়েছে, কিন্তু লাখ লাখ মানুষ আদালতে ঘুরছে: আবুল কালাম
স্বতন্ত্র এমপি আবুল কালাম আজাদ বলেন, সুন্দর সুন্দর ভবন হয়েছে, কিন্তু লাখ লাখ মানুষ আদালতে ঘুরছে। মামলাজট বাড়ছে।

ড. ইউনূস প্রসঙ্গে পঙ্কজের বক্তব্য এবং দীপু মনির জবাব
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, মাইক্রোক্রেডিটের নামে গরিবের রক্তচোষা বন্ধ করুন। ইউনূসের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিল ৩৫ শতাংশ, যেটা ৫ শতাংশের কম সুদে।

আমাদের কথা হচ্ছে, জোবরা গ্রাম কী আগের মতো আছে, নাকি বদলে গেছে? মাইক্রো ক্রেডিট যদি সফল হতো, তাহলে গরিবের রক্তচোষা গ্রামীণ টেলিকম, প্যাকেজেস লিমিটেডের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা, বিদেশিদের লবিংয়ে টাকা দেওয়া।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর ব্যাঙের ছাতার মতো যে এনজিওগুলো আছে, সেগুলো তদন্ত করে বন্ধ করা হোক। মুজাহিদ যখন মন্ত্রী ছিল, তখন তাদের ব্যাঙের ছাতার মতো এনজিওর লাইসেন্স দিয়েছিল। দয়া করে সেগুলো খুঁজে বন্ধ করুন।

সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান নয়, এটি আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সরকারের প্রতিষ্ঠান। এটি এনজিও বা স্বেচ্ছাসেবী কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নয়।

যেভাবে বিশ্বে পরিচয় দেওয়া হয়, তা সঠিক নয়। এটি আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। এটি শুধু ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত; যদিও পরে নানারকম ব্যবসার প্রসার করেছে তার চার্টারের বাইরে গিয়ে।

মন্ত্রী বলেন, এনজিও বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের অর্থের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে যখনই সরকার কোনো উদ্যোগ নিয়েছে, তখনই তারা বিদেশিদের নিয়ে সরকারের ঘাড়ের ওপর চড়াও হয়েছে। বলা হয়েছে, পাবলিক স্পেস সোশ্যাল সেক্টরের জন্য কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সূত্র-ইত্তেফাক