13.4 C
Chittagong
শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদঅর্থ-বাণিজ্যজব্দ ব্রাহমা জাতের গরু ঈদে কোটি টাকায় বিক্রি!

সাদিক এগ্রোর প্রতারণা

জব্দ ব্রাহমা জাতের গরু ঈদে কোটি টাকায় বিক্রি!

ছাগলকাণ্ডে’ আলোচিত সাদিক এগ্রোর বিরুদ্ধে আমদানি নিষিদ্ধ জাতের গরু নিয়ে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে তা কোটি টাকায় বিক্রির অভিযোগে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার এবং সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নে অবস্থিত সাদিক এগ্রোর খামারে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গতকাল সোমবার দুদকের ৯ সদস্যের একটি দল এ অভিযান চালায়। অভিযানকালে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের দরপত্র জালিয়াতিসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখেন দুদকের সদস্যরা।

সাভারের এই সরকারি খামার থেকেই আলোচিত সাদিক এগ্রোতে নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরু নিলামের মাধ্যমে গত রমজানে সুলভমূল্যে মাংস বিক্রির শর্তে সরবরাহ করা হয়েছিল।

অভিযোগ রয়েছে, সাদিক এগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেন এই ব্রাহামাগুলো জবাই করে তার মাংস গত রমজানে সুলভমূল্যে বিক্রি না করেই গরুগুলো তার খামারে রেখে দেন।

পরবর্তী সময়ে এসব ব্রাহামা জাতের গরুগুলোর এক-দেড় শ বছরের বংশপরিচয় আছে—এমন প্রচারণা চালিয়ে তা কোটি টাকা দাম হাঁকিয়ে বাজারে তোলা হয়।

এর মধ্যে তিনটি গরু গত কোরবানির ঈদে দেড় থেকে ২ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এসেছে।

জানা গেছে, ২০২১ সালের জুলাই মাসে করোনা মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে শাহিওয়াল গরুর নাম দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে টার্কিশ এয়ারলাইনসে ১৮টি ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি করেছিল সাদিক এগ্রো, যা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়ে। গরু আমদানির জন্য সাদিক এগ্রো তিনটি জাল নথি জমা দিয়েছিল।

নথিগুলো হলো: গবাদিপশু আমদানি-সংক্রান্ত একটি নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণী কোয়ারেন্টাইন বিভাগের কাছ থেকে একটি চিঠি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গবাদিপশু আমদানির অনুমতিপত্র, যার প্রতিটিকেই জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন শুল্ক কর্মকর্তারা। সে সময় গরু আমদানির বৈধ কাগজ উপস্থাপন করতে পারেননি সাদিক এগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেন।

কাস্টমস থেকে জব্দ করা গরু গুলো বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে সাভারে কেন্দ্রীয় গো- প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে লালনপালনের জন্য হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে তিনটি গরু মারা যায়।

চলতি বছরের শুরুতে কোনো প্রক্রিয়ায় সরকারের এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫টি ব্রাহমা জাতের গরু সাদিক এগ্রোকে দেওয়া হয়েছে, সেটিসহ অন্যান্য বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে দুদকের টিম।

গতকাল কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অভিযান শেষে সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নে অবস্থিত সাদিক এগ্রোর খামারে অভিযান চালায় দুদক। সেখানে তিনটি ব্রাহমা জাতের গাভী, ৭ থেকে ১০ মাস বয়সী সাতটি ব্রাহমা জাতের গরুর বাছুর পাওয়া গেছে। এছাড়া, আলোচিত সেই ১৫ লাখ টাকার ছাগলটিও এখানে পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে সাদিক এগ্রোর পুরো খামারটি ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ১০টি উট ও দুটি ঘোড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির দুই শতাধিক গরু রয়েছে। এছাড়াও খামারে কয়েক হাজার হাঁস, মুরগি, কবুতর রয়েছে।

সাদিক অ্যাগ্রোর খামারটির দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার জাহিদ খান বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। এখানে মূলত দুধ উত্পাদন করে প্রতিদিন ঢাকায় সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে খামারটিতে গাভি ও বাছুর মিলিয়ে দুই শতাধিক গরু, ১২টি উট ও দুটি ঘোড়াসহ বেশকিছু হাস-মুরগি রয়েছে।

খামারে কর্মরত একাধিক কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে অনেক আগে থেকে ব্রাহমা জাতের গরু পালন করা হয়। পরবর্তী সময়ে সেগুলো সুযোগ বুঝে বিক্রয় করে দেওয়া হয়। তবে এসব বিষয়ে তাদের কথা বলতে নিষেধ করা আছে।

গতকাল সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার এবং সাদেক এগ্রোর খামারে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সাদিক এগ্রোর সাভারের খামার থেকে বেশকিছু খাতা ও নথিপত্র জব্দ করেছি। সেখানে পাওয়া পশুগুলোর ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব এবং সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, ২০২১ সালে অবৈধভাবে ১৮টি ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি করে সাদিক এগ্রো। জব্দ করার পর সেগুলো পরিচর্যার জন্য কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখা হলেও গত এপ্রিলে রমজান মাসে কয়েকটি শর্ত দিয়ে গরু জবাই করে বিক্রির দায়িত্ব নেন সাদিক এগ্রোর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইমরান হোসেন।

কিন্তু এবার কোরবানির ঈদে একই রকমের গরু বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায় সাদিক এগ্রোর বিরুদ্ধে। তাই সাদিক এগ্রোকে দেওয়া ব্রাহমা গরুগুলো জবাই না করে প্রদর্শন করে বিক্রি করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

এছাড়া ২০২৩ ও ২০২৪ সালের প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীতে প্রকাশ্যে ইমরান ব্রাহমা জাতের গরু উঠিয়েছিলেন। এসব গরু কোথা থেকে এলো সেসব তথ্যের খোঁজেও সাভার কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অভিযান পরিচালনা করে দুদক।

পাশাপাশি সাদিক এগ্রোর সঙ্গে সেখানকার কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত কি না এবং কোনো পক্ষ অনৈতিক সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এ বছর কোরবানির জন্য সাদিক এগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনেছিলেন এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত।

এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তখন সেই ছাগলটি আর মতিউর রহমানের ছেলে সাদিক এগ্রো থেকে নেননি।

তবে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে মতিউর রহমান ও তার পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসে।

মতিউরকে এরই মধ্যে এনবিআর থেকে অপসারণ করা হয়েছে। তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এছাড়া, মোহাম্মদপুরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সাদিক এগ্রোর খামারটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।