অগ্নিদগ্ধ ভবনটিকে দেখা বোঝা মুশকিল এটি একটি থানা। আগুনে পুড়ে দেয়ালগুলো কালো হয়ে গেছে। ভেতরের কক্ষগুলোতে শুধুই ধ্বংসস্তূপ।
থানার সামনে স্তূপ করে রাখা আছে পুলিশের কিছু পোশাক, কয়েক জোড়া বুট, কিছু বুলেট প্রুফ জ্যাকেট এবং আরো সরঞ্জাম।
সব কিছুই অর্ধেকের মতো পোড়া, ব্যবহারের উপযুক্ত নয়।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকার মিরপুর মডেল থানায় গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। এ থানার আটজন আনসার সদস্য ডিউটি করছেন।
পুলিশের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ কতটা পুঞ্জিভূত হয়েছিল, মিরপুর থানা যেন সেই সাক্ষ্য বহন করছে।
থানার সামনে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি দেখছিলেন অফিসগামী কামাল হোসেন। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “পুলিশের এমন অবস্থা হইব, এইটা ভাবতেও পারি নাই।চ্
শুধু মিরপুর থানা নয়, বাংলাদেশের থানাগুলোতে কোন পুলিশ নেই গত সোমবার দুপুরের পর থেকে।
একযোগে সব থানা ফেলে পুলিশ সদস্যদের পালিয়ে যাবার ঘটনা অতীতে বাংলাদেশে কখনো দেখা যায়নি।
বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এ ধরণের ঘটনা বিরল বলে উল্লেখ করছেন বর্তমান ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, অনেক সময় যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে এ ধরণের ঘটনা দেখা যায়। পুলিশের জন্য এমন পরিস্থিতি তৈরি হলো কেন সেটি এক বড় প্রশ্ন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি যতই প্রতিকূলে থাক না কেন, পুলিশ সদস্যদের মাঠে যেতেই হবে। অন্তত তাদের শুরু করতে হবে।
সাবেক পুলিশ প্রধান নুরুল হুদা বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “পুলিশের উপস্থিতি দৃশ্যমান করতে হবে। তারা বিভিন্ন স্থাপনায় গিয়ে সেগুলোর নিরাপত্তা বিধান করতে পারে। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলে পুলিশের ওপর আস্থা রাখবে সাধারণ মানুষ।
পুলিশ নিয়ে সার্বিকভাবে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ আছে সেগুলো নিরসনের জন্য পুলিশের সংস্কার করা জরুরী। এই সংস্কার খুব দ্রুততার সাথে করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন নুরুল হুদা।
মি. হুদা মনে করেন, পুলিশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায় আছে। কারণ বহু বছর ধরে পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
এদিকে, পুলিশ কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, পুলিশের মধ্যে একটি বড় ধরণের পরিবর্তন বেশ অবশ্যম্ভাবী।
পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেন, সবগুলো থানার ওসি এবং প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপারদের বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
বিক্ষোভের সময় যেসব জায়গায় পুলিশ বেশি শক্তি প্রয়োগ করেছে সেখানে পরিবর্তন আসবে সবার আগে। এছাড়া বাকিসব পরিবর্তন ধাপে ধাপে করা হবে বলে যে কর্মকর্তা জানান।
তিনি মনে করেন, যেসব পুলিশ কর্মকর্তা পুলিশকে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং অতীতে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত তাদের শাস্তি না দিলে পুলিশের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরানো কঠিন হবে। কিন্ত এসব কাজ একযোগে করা সম্ভব নয় বলে সে কর্মকর্তা উল্লেখ করেন। বিবিসি বাংলা