26.3 C
Chittagong
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদআন্তর্জাতিকসামরিক সক্ষমতায় কে এগিয়ে, ভারত না পাকিস্তান?

সামরিক সক্ষমতায় কে এগিয়ে, ভারত না পাকিস্তান?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।

কূটনীতিক বহিষ্কার, বিমান চলাচলের জন্য আকাশপথ বন্ধ করাসহ পাল্টাপাল্টি বেশ অনেকগুলো পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে দুই দেশই। এর আগে ভারত-পাকিস্তান তিনবার যুদ্ধ জড়িয়েছে। এর মধ্যে সবশেষ ছিল ১৯৭১ সালে।

এছাড়া সীমিত পরিসরে একটি যুদ্ধ হয় ১৯৯৯ সালে কারগিলে, যেবার প্রথমবারের মতো পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ্যে আসে।

বিশ্বে সামরিক শক্তি এবং অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে ধারণা তুলে ধরে গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার। তাদের ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে ২০২৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের পরে ভারত বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী সামরিক শক্তি হবে।

তুলনামূলকভাবে, পাকিস্তানের অবস্থান কিছুটা পেছনে। ১৪৫টি দেশের মধ্যে ১২তম অবস্থানে তারা। বিবিসি’র এক প্রদিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সৈন্য সংখ্যায় এগিয়ে কারা
সেনাসংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে ভারত। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের মতে, ভারতের মোট সক্রিয় সৈন্য সাড়ে ১৪ লাখের কিছু বেশি, অন্যদিকে পাকিস্তানের সৈন্য সংখ্যা সাড়ে ৬ লাখের কিছু বেশি। রিজার্ভ সেনা বা প্যারামিলিটারি বাহিনীর ক্ষেত্রেও এগিয়ে ভারত।

স্থলভাগের শক্তিতে
স্থলভাগের শক্তি বিবেচনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ভারত। তবে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সেলফ প্রোপেলড আর্টিলারি ও মোবাইল রকেট প্রোজেক্টর বা রকেট লঞ্চারের সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের সেলফ প্রোপেলড আর্টিলারি সংখ্যা ৬৬২, ভারতের ১০০। পাকিস্তানের মোবাইল রকেট প্রোজেক্টর ৬০০, ভারতের ২৬৪।

অন্য বেশ কিছু দিকে সংখ্যায় এগিয়ে ভারত। ভারতের ট্যাংক সংখ্যা ৪ হাজার২০১টি, সাঁজোয়া যান ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯৪টি, টোওড আর্টিলারি বা টেনে নেয়ার কামান ৩ হাজার ৯৭৫টি। পাকিস্তানের ট্যাংক রয়েছে ২ হাজার ৬২৭ টি, সাঁজোয়া যান ১৭ হাজার ৫১৬টি, টোওড আর্টিলারি ২ হাজার ৬২৯ টি।

নৌবাহিনীর রণতরীতে এগিয়ে ভারত
শুধুমাত্র মাইন ওয়ারফেয়ার ছাড়া নৌবাহিনীর রণতরীর সবদিকেই পাকিস্তানের তুলনায় এগিয়ে ভারত।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের হিসেবে ভারতীয় নৌবাহিনীর মোট ২৯৩টি যুদ্ধজাহাজের মধ্যে রয়েছে দুটি বিমানবাহী রণতরী, ১৩টি ডেস্ট্রয়ার, ১৪টি ফ্রিগেট, ১৮টি সাবমেরিন, ১৮টি কর্ভেট ও ১৩৫টি টহল জাহাজ।

পাকিস্তানি নৌবাহিনীর মোট ১২১টি যুদ্ধজাহাজের মধ্যে বিমানবাহী রণতরী ও ডেস্ট্রয়ার নেই। তাদের রয়েছে নয়টি ফ্রিগেট, আটটি সাবমেরিন, নয়টি কর্ভেট, এবং ৬৯টি টহল জাহাজ।

আকাশ পথের শক্তি
ভারতের বিমানবাহিনীর অধীনে রয়েছে ৩১টি স্কোয়াড্রন, যেখানে প্রতিটি স্কোয়াড্রনে ১৭ থেকে ১৮টি যুদ্ধবিমান থাকে। অপরদিকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর রয়েছে ১১টি স্কোয়াড্রন।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের কাছে মোট ২ হাজার ২২৯টি বিমান রয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের আছে ১ হাজার ৩৯৯টি।

পাকিস্তানের কাছে আছে ৪১৮টি যুদ্ধবিমান-যার মধ্যে ৯০টি বোমারু বিমান। বিপরীতে ভারতের রয়েছে ৬৪৩টি যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে ১৩০টি বোমারু বিমান।

যুদ্ধবিমানের বাইরেও ভারতের রয়েছে ২৭০টি পরিবহন বিমান, ৩৫১টি প্রশিক্ষণ বিমান, ৬টি রিফুয়েলিং ট্যাঙ্কার এবং ৯৭৯টি হেলিকপ্টার, যার মধ্যে ৮০টি আক্রমণাত্মক হেলিকপ্টার।

পাকিস্তানের রয়েছে ৬৪টি পরিবহন বিমান, ৫৬৫টি প্রশিক্ষণ বিমান, ৪টি রিফুয়েলিং ট্যাঙ্কার এবং ৪৩০টি হেলিকপ্টার, যার মধ্যে ৫৭টি আক্রমণাত্মক হেলিকপ্টার।

ভারতের সক্রিয় সামরিক বিমানঘাঁটির সংখ্যা ৩১১টি আর পাকিস্তানের ১১৬টি।

পারমাণবিক অস্ত্র
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে সুইডিশ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০২৪ সালের প্রতিবেদন বলছে পারমাণবিক ওয়ারহেডের দিক থেকে দুটি দেশ প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতে আনুমানিক ১৭২টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে, আর পাকিস্তানে আছে আনুমানিক ১৭০টি।

তবে, দুই দেশের কয়টি ওয়ারহেড ঠিক অপারেশনাল বা প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে, তা ঠিক স্পষ্টভাবে জানা যায় না।

ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতায় দুই দেশের অবস্থান
ক্ষেপণাস্ত্রের ধরন ও দূরত্ব পাড়ি দেয়ার সক্ষমতা সম্পর্কে জানা যায় সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ থেকে।

পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে ক্ৰুজ, ট্যাকটিক্যাল ও স্বল্প-মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ট্যাকটিক্যাল ক্ষেপণাস্ত্র যেমন হাতাফ-১ ও নাসের ৬০-১০০ কি.মি দূরত্বে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে আব্দালি (২০০ কি.মি), গজনবি (৩০০ কি.মি), রা’দ (৩৫০ কি.মি), বাবর (৭০০ কি.মি) ও শাহীন-১ (৭৫০-১০০০ কি.মি)।

মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে গৌরি-১ (১৫০০ কি.মি), গৌরি-২ (২০০০ কি.মি), আবাবিল (২২০০ কি.মি), শাহীন-২ ও শাহীন-৩ (২৫০০-২৭৫০ কি.মি) উল্লেখযোগ্য। আবাবিল ও শাহীন-৩ একসাথে কয়েকটি ওয়ারহেড বহনে এবং শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম।

অন্যদিকে ভারতের রয়েছে পৃথ্বী সিরিজ (২৫০-৬০০ কি.মি), অগ্নি সিরিজ (১২০০-৮০০০ কি.মি), নির্ভয়া ও ব্রহ্মোস ক্ৰুজ ক্ষেপণাস্ত্র। অগ্নি-৫ একটি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র যা সাত থেকে আট হাজার কি.মি পাড়ি দিতে সক্ষম।

ভারতের ধনুষ হলো নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র।। ভারতের সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য কে-১৫ বা বি-০৫ (সাগরিকা/শৌর্য) ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ প্রায় ৭০০ কি.মি।

ভারতের সুপারসোনিক ক্ৰুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্রহ্মোস পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম। ২০২২ সালে একটি ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ভুলবশত পাকিস্তানে গিয়ে পড়েছিল।

২০২৪ সালে ভারত সফলভাবে একটি হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, যার রেঞ্জ ১৫০০ কি.মির বেশি এবং এটি আকাশ, স্থল ও জলপথ, সব জায়গা থেকে আঘাত হানতে সক্ষম।

হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র সাধারণত শব্দের গতির পাঁচ গুণ দ্রুত চলে। আর সুপারসনিক গতি সাধারণত শব্দের গতির চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয়।

ড্রোনের সংখ্যা
ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই তাদের অস্ত্রাগারে সামরিক ড্রোনের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিদেশ থেকে উন্নত ড্রোন কেনার পাশাপাশি নিজেরাও ড্রোন তৈরি করছে। এসব ড্রোন পাইলট ছাড়া শত্রুর ওপর নজরদারি, গুপ্তচরবৃত্তি ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে ব্যবহৃত হয়।

এই ড্রোনগুলো দীর্ঘ সময় আকাশে উড়তে পারে এবং শত্রুর রাডারে ধরা না পড়ে সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড ও ঘাঁটি পর্যবেক্ষণ করতে পারে।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক রাহুল বেদী জানান আগামী দুই থেকে চার বছরের মধ্যে ভারতের কাছে প্রায় পাঁচ হাজার ড্রোন থাকবে।

তার মতে পাকিস্তানের ড্রোন সংখ্যা ভারতের চেয়ে কম হলেও, সেগুলোর মধ্যে বৈচিত্র্য রয়েছে যার সক্ষমতার জায়গা ভিন্ন ভিন্ন এবং ১০ থেকে ১১ ধরনের ভিন্ন ব্র্যান্ড বা মডেল রয়েছে তাদের।

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে ৩১টি ‘প্রেডেটর’ ড্রোন কেনে যেটিকে বিশ্বের সবচেয়ে সফল ও ভয়ংকর ড্রোন বলা হয়। একই সাথে ৫০ কোটি ডলার মূল্যের বোমা এবং লেজার গাইডেড মিসাইলও কেনা হবে।

পাকিস্তানের নিজস্ব তৈরি ড্রোনের মধ্যে আছে ‘শাহপার’ (১, ২, ৩), ‘বুরাক’ ও ‘উকাব’। শাহপার-৩ মাঝারি উচ্চতায় ৩০ ঘণ্টা উড়তে পারে এবং অস্ত্র বহনে সক্ষম।

বুরাক ২০১৫ সালে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রথম ব্যবহার করা হয়। উকাব মূলত নজরদারি ও ছোট লক্ষ্যবস্তু শনাক্তে ব্যবহৃত হয়।