চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে রাত পৌনে ৯টায় জন্ম হওয়া একটি নবজাতককে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এরপর শিশুটিকে কবর দিতে কার্টনে করে নিয়ে আসা হয় বাড়ির কবরস্থানে। কবর দেওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন। জানাজা শেষে কবরস্থ করার জন্য কার্টন খুলতেই কেঁদে ওঠে মৃত নবজাতকটি।
পরে স্বজনরা ফের ওই হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক দ্রুত শহরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। রাত দেড়টায় নবজাতকটিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
মারা যাওয়া সেই নবজাতক এখনো বেঁচে আছে। বর্তমানে সে চমেক হাসপাতালের ৬ তলায় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
শনিবার (১ মে) রাতে উপজেলার ১০নং মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামের উমর আলী সারেং বাড়ির কবরস্থানে মৃত বাচ্চাকে কবর দিতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, সাত মাস আগে বিয়ে হয় মো. ইউনুস আলীর ও জেসমিন আক্তারের। বিয়ের একমাস পর জেসমিন গর্ভবতী হয়। কয়েকবার যান চিকিৎসকের কাছে। মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ রয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক।
হঠাৎ রক্তক্ষরণ হলে শনিবার সকালে চিকিৎসকের কাছে গেলে আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে রিপোর্টও ভালো আসে। কিন্তু বিকেলে পুনরায় আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে রিপোর্ট ভালো নয়, নবজাতক মারা গেছে বলে জানান মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বরত গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. শারমীন আয়েশা।
এরপর ডেলিভারির প্রস্তুতি নেন এবং রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে নবজাতক ভূমিষ্ঠ হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী একটি কার্টনে করে বাড়ি নিয়ে জানাজা শেষে কবরস্থ করার জন্য কার্টন খুললে নবজাতক কেঁদে ওঠে। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শিশুটিকে। সেই নবজাতক এখনো বেঁচে আছে।
নবজাতকটির পিতা মো. ইউনুস আলী অভিযোগ করে বলেন, সকালেও বাচ্চা সুস্থ আছে বলে জানিয়েছিলেন ডা. শারমীন আয়েশা। এরপর আমার স্ত্রীর শরীরে স্যালাইন পুশ করার পর তীব্র পেট ব্যথা শুরু হয়।
পরে বিকেলে পুনরায় চেকআপ করে বলেন বাচ্চা বেঁচে নেই। পরে ডেলিভারির ব্যবস্থা করেন। আমাকে বাচ্চা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য কার্টনের ব্যবস্থা করতে বলেন। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হওয়ার পর রাত ৯টার দিকে কার্টুনে করে বাচ্চাকে কাফন দাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাই।
এরই মধ্যে কবর খোঁড়াও সম্পন্ন হয়ে গেছে। যেহেতু ৫ মাস ১৯ দিন বয়সী বাচ্চা পরিবার ও বাড়ির সবাই কার্টন খুলতে নিষেধ করেন। পরে কবর দেওয়ার জন্য কার্টন খুলে দেখি বাচ্চা কান্না করছে। আমার বাচ্চা এখনো বেঁচে আছে। সে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে ছেলে ফিরে আসুক মায়ের কোলে, আল্লাহর কাছে সে দোয়া কামনা করে মো. ইউনুস আলী আক্রোশের সাথে বলেন, তারা কি ডাক্তার? নাকি অন্যকিছু। জীবিত বাচ্চাকে মৃত বলে কার্টনে করে নিয়ে যেতে বলে।
আমার বাচ্চাকে মৃত বলে ৫ মাস ১৯ দিন বয়সে ডেলিভারি করে। বাচ্চা এখনো অপরিপক্ব। তার বাচ্চার এমন করুণ পরিণতির জন্য তিনি ডাক্তার শারমীন ও মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালকে দায়ী করে তাদের শাস্তি দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ রানা বলেন, রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শনিবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে নরমাল ডেলিভারি হয়ে যায়।
ডেলিভারি হওয়ার পর ১ মিনিট বাচ্চার নড়াচড়া ছিল। ১৫ মিনিট ওই চিকিৎসকের অবজারবেশনে রাখা হয়। এরপর রোগীর স্বজনরা তাকে দেখতে আসে। একপর্যায়ে কখন হাসপাতাল থেকে বাচ্চাটিকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়, আমরা বলতে পারি না।
তিনি দাবি করছেন, নবজাতকটি মারা গেছে, এমনটা স্বজনদের বলা হয়নি। তারা বাড়ি নিয়ে কেন কবর দিচ্ছে সেটাও জানি না। যদি মারা যেতো তাহলে আমরা ডেথ সার্টিফিকেট দেব, রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি করব। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছুই হয়নি।
নবজাতকটিকে রাতে পুনরায় হাসপাতালে আনলে আমরা তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমি অবগত নই। এখন শুনলাম। সাধারণত ৫-৬ মাসের বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হলে বাঁচার কথা না। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।