28.9 C
Chittagong
শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪
spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদলিডহলি আর্টিজান হামলার ৮ বছর,এখনো সক্রিয় জঙ্গিরা

হলি আর্টিজান হামলার ৮ বছর,এখনো সক্রিয় জঙ্গিরা

দেশের ভয়াবহ হলি আর্টিজান হামলার আট বছর আজ। ২০১৬ সালের এদিন রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলা চালায় নব্য জেএমবি।

এতে দেশবিদেশিসহ প্রাণ হারায় ২২ জন। তাদের মধ্যে দুই জন পুলিশ সদস্যও ছিলেন। এই হামলার ঘটনায় গ্রেফতার সাত জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্র্যাইব্যুনাল। পরে উচ্চ আদালত তাদের আমৃত্যু কারাগারে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

ঐ হামলার পর একের পর এক অভিযানে জঙ্গিরা দুর্বল হয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গি পুরো নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণে আছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে জঙ্গি হামলার এ রকম বড় ঘটনার পরও এখনো অনলাইনে সক্রিয় রয়েছে জঙ্গিরা। এক সময় এনক্রিপটেড অ্যাপস টেলিগ্রাম ও থ্রিমাতে তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল।

তবে এখন নতুন নতুন সব অ্যাপসে সদস্য সংগ্রহ, প্রচারণা, নিজেদের মধ্যে ট্রেনিং মডিউল শেয়ার করাসহ যাবতীয় কার্যক্রম চালাচ্ছে অনেকটা নির্বিঘ্নে। ফলে জঙ্গি দমনে এক রকম হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রশ্ন উঠেছে তাদের সক্ষমতা নিয়েও।

জানতে চাইলে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান (অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সাইবার স্পেসে জঙ্গিদের তৎপরতা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা নিত্যনতুন অ্যাপস তৈরি হচ্ছে। যখন নব্য জেএমবি ছিল তখন তারা নির্দিষ্ট দুটি অ্যাপস ব্যবহার করত।

পরে অন্যান্য অ্যাকটিভ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের গ্রেফতারের পর তাদের ডিভাইসের মাধ্যমে দেখা গেছে ফের তারা নতুন অ্যাপস ব্যবহার করছে। এজন্য জঙ্গি দমন আমাদের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

এসব অ্যাপসের বৈশিষ্ট্য এমন যে, কোনো রেকর্ড আমরা পাই না। তারপরও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সাইবার স্পেসকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেছি।

আমাদের সার্বক্ষণিক অনলাইন সার্ভিলেন্স আছে। সেখান থেকে শনাক্ত করে বিভিন্ন সময় আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হচ্ছি।

এদিকে হলি আর্টিজানে হামলার পর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সন্ত্রাসবাদে সরকারও জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে। গঠন করা হয় পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী একাধিক ইউনিট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাগাতার অভিযানের মুখে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে জঙ্গিরা।

গত আট বছরে র‌্যাব ১ হাজার ৮৭৫ জন ও সিটিটিসি ৮২৬ জন জঙ্গি গ্রেফতার করেছে। তবে এরপরও থেমে নেই জঙ্গিদের কার্যক্রম। নিজেদের খোলস বদলে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে তারা।

র‌্যাবের মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ বলেছেন, দেশ থেকে জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। যারা গোপনে তত্পরতা চালাচ্ছে, র‌্যাবের অভিযানে তারা গ্রেফতার হচ্ছে।

জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে একটি জঙ্গি দল বান্দরবানের গহিন পাহাড়ি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) মাধ্যমে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিল।

সেখান থেকে র‌্যাবের তৎপরতায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৫৫ জনকে গ্রেফতার করে। অনেকে ভুল পথে যাওয়ায় তারা আত্মসমর্পণ করেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, সব বাহিনীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশে জঙ্গিবাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বড় ধরনের কোনো জঙ্গি হামলার হুমকি ও আশঙ্কা এখন নেই।

হলি আর্টিজান হামলার পর সব জঙ্গির সক্ষমতা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ইনডেক্সের র‌্যাকিংয়েও বাংলাদেশ এখন অনেক উন্নত দেশের চেয়ে নিরাপদ অবস্থানে আছে। সংঘবদ্ধ হয়ে জঙ্গিদের হামলার কোনো সুযোগ নেই।

হলি আর্টিজান মামলা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘নৃশংস এই জঙ্গি হামলার মামলায় ট্রাইব্যুনাল সাত জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। হাইকোর্ট ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে সব আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে। আসামিদের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই।’

তিনি বলেন, এখনো হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়নি। রায় পেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হাইকোর্টের যে বেঞ্চ এ রায় দিয়েছে, সেখানে আরও অনেক ডেথ রেফারেন্স মামলা রয়েছে। সেগুলোর ওপর রায় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া হলি আর্টিজান মামলার ট্রাইব্যুনালের রায়টি বড় ভলিউমের। ঐ রায় বিচার-বিশ্লেষণ করে পূর্ণাঙ্গ রায় দিতে সময় লাগছে আদালতের। এজন্য দশ মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা এখনো রায় পাইনি। আমি মনে করি রায় পেতে এই সময় লাগাটা স্বাভাবিক।’

বিশ্বের ১৬৩টি দেশের সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কাজ করে থাকে আন্তর্জাতিক সংস্থা— ‘গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্স (জিটিআই)’। যেখানে এক থেকে দুই বছর পরপর বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের প্রেক্ষাপট, কোন দেশ কতটা সন্ত্রাসপ্রবণ সেসব নিয়ে র‌্যাকিং তৈরি করে থাকে জিটিআই।

গতকাল রবিবার জিটিআইয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ইনডেক্সে সব দেশ মিলে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৩২তম। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ, তাদের র‌্যাংকিং নাম্বার ৩০তম। এমনকি যুক্তরাজ্যের অবস্থান এখানে ৩১তম।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে জিটিআইয়ের শীর্ষে রয়েছে আফগানিস্তানের নাম। এছাড়াও পাকিস্তান ৪ নাম্বারে ও ভারত ১৪-তে। এসব হিসাবেও বাংলাদেশের জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদবিরোধী অগ্রগতি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক হিসেবে দেখছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।