চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকার স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডে (এসএওসিএল) এর তিন কর্মকর্তার পারস্পরিক যোগসাজসে ৯০ লাখ ৩ হাজার ৫শ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব অর্থ আত্মসাতে সহযোগীতা করেছেন ব্যবসায়ীসহ আরও পাঁচজন। প্রায় এক যুগ আগে এমন ঘটনা ঘটলেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি কারও। সম্প্রতি দুদকের অনসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
সোমবার এসএওসিএলের তিন কর্মকর্তাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ আত্মসাতে সহযোগিতার অভিযোগে দুদকের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলা দায়েরের পর চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য প্রকাশ হয়।
জানা গেছে, সোমবার দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এ দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রাজু আহমেদ বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।
পৃথক দুই মামলায় ৮ আসামি হলেন-এসএওসিএল’র ম্যানেজার (এডমিন) বেলায়েত হোসেন, সাবেক প্রজেক্ট কো–অর্ডিনেটর এবং বর্তমান ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) কামরুল হোসেন, সাবেক উপ–ব্যবস্থাপক (হিসাব এবং বর্তমান উপ–ব্যবস্থাপক (নিরীক্ষা) আতিকুর রহমান।
এছাড়াও এমআই চৌধুরী এন্ড কোং (ডিটিজি) লিমিটেডের পরিচালক ফেরদৌস আরা, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফাইয়াজ ফারহান, নগরীর রাইফেল ক্লাব মার্কেটের ফেমাস ইলেক্ট্রিক এন্ড ইলেক্ট্রনিঙের প্রোপাইটর হারিছ উদ্দিন, নগরীর সদরঘাটের দক্ষিণ নালাপাড়ার বাসিন্দা নারায়ণ চক্রবর্তী ও তার স্ত্রী রীতা চক্রবর্তীকে এসব মামলায় আসামিকরে দুদক।
দুদকের দায়ের করা একটি মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০১৪ সালের ১৬ জুন চট্টগ্রাম বন্দর হতে এসএওসিএল’র আমদানি করা লুব্রিকেন্ট অয়েল খালাসে ৭৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। যার জন্য খরচের অনুকূলে ভাউচার তৈরি করে পরবর্তীতে ব্যাংকের মাধ্যমে তিন চেকে তা পরিশোধও করা হয়।
কিন্তু খরচের সেই ভাউচারে ছিল না অনুমোদনকারীর স্বাক্ষর। বরং অর্থ লোপাট করতে নিজেরাই নিজেদের স্বাক্ষর দিয়ে অর্থ ছাড় করান। পরবর্তীতে বিভিন্ন একাউন্টের মাধ্যমে তা আত্মসাৎ করেন।
অর্থ আত্মসাতের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি অনুসন্ধান চালায় দুদকের টিম। এতে দেখা যায়, অনুমোদনকারীর স্বাক্ষর ব্যতিরেকে ফেমাস ইলেট্রিক এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স নাম প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধের নিমিত্তে বিল পরিশোধপত্র তৈরি করে আসামি বেলায়েত হোসেন, কামরুল হোসেন এবং আতিকুর রহমান স্বাক্ষর করে পেমেন্ট অর্ডার প্রস্তুত করে।
একই তারিখে কোম্পানির ব্যাংক এশিয়া লিমিডেট ইপিজেড শাখার একটি চেকের মাধ্যমে ২৬ লাখ টাকা ফেমাস ইলেক্ট্রিক্স এন্ড ইলেক্ট্রনিক্সকে প্রদান করা হয়।
একইভাবে একই তারিখে একই কায়দায় রিতা চক্রবর্তীর নামে ২৬ লাখ টাকার এবং নারায়ণ চক্রবর্তীর নামে আরেকটি চেকের মাধ্যমে আরও ২৬ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন একাউন্টে হস্তান্তর করা হয়।
এভাবে আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশে ৭৮ লাখ টাকা আত্মসাত করেন বলে দুদকের করা মামলায় লিপিবদ্ধ করা হয়।
অপর মামলার এজহারে বলা হয়, আসামি বেলাল হোসেন, কামরুল হাসান ও আতিকুর রহমান পরস্পর যোগসাজসে প্রতারণার মাধ্যমে ১২ লাখ ৩ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
মামলার বিষয়ে দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ জানান, অসাধু উপায়ে পারস্পরিক যোগসাজশে রাষ্ট্রীয় অংশীদার প্রতিষ্ঠান এসএওসিএল’র তিন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীসহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে ৯০ লাখ ৩ হাজার ৫শ’ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।
এরমধ্যে বেলায়েত, কামরুল, আতিকুর, ফেরদৌস আরা ও ফাইয়াজ পরস্পর যোগসাজসে ৭৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যা দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অন্যদিকে নারায়ণ ও রীতা ২৬ লাখ টাকার পৃথক তিনটি চেক তাদের হিসাবে জমা করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতে অপরাপর আসামিদের সহযোগিতা করায় দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারায় অপরাধ করেছেন।
ফলে কমিশনের নির্দেশে গতকাল সোমবার পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা তদন্তকালে অন্য কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তা আমলে নেওয়া হবে বলে জানান দুদকের এ কর্মকর্তা।